Monday, August 4, 2025

আমি গরিবের ছেলে, টাকার লোভ সামলাতে পারিনি

আরও পড়ুন

চাঁদাবাজির অভিযোগে গুলশান থানার মামলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চাঁদাবাজির ১০ লাখ টাকা আমি ও অপু (একই সংগঠনের আরেক বহিষ্কৃত নেতা) সমানভাগে ভাগ করে নিয়েছি। আমি গরিবের ছেলে, তাই টাকার লোভ সামলাতে পারিনি। এছাড়াও পুলিশের কথা বিশ্বাস করে ওই বাসায় গিয়ে গ্রেফতার হন বলে জবানবন্দিতে জানান তিনি।

রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসিবাদী লোকজন গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। ঘটনার দিন ১৭ জুলাই রাতে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জুর ফোনের মাধ্যমে গুলশান জোনের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি ডিসিকে জানান, গুলশান থানার আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদ নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে ডিসি জানান, বিষয়টি তিনি গুলশান থানার ওসিকে জানিয়েছেন। এরপর রাত ২টার দিকে তিনিসহ মঞ্জু, জানে আলম অপু, সাবাব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার, সাদাকাউম সিয়াম, তানিম ওয়াহিদ ও আতিক থানায় যান। তখন ওসি জানান, এত রাতে গুলশান সোসাইটিতে অভিযান চালানো যাবে না। ফজরের আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষার পর গুলশান থানার একটি টিমের সঙ্গে তারা শাম্মী আহমেদের বাড়িতে যান। গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তবে শাম্মীকে বাসায় না পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় তারা ফিরে আসেন।

আরও পড়ুনঃ  আরও চার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো আসাদুজ্জামান নূরকে

পুলিশের সঙ্গে অভিযান শেষে অপু রিয়াদকে বলেন, ওই বাসা থেকে তিনি শাম্মীর এয়ারপড নিয়ে এসেছেন। পরে তারা দুজন সকাল ১০টার দিকে এয়ারপড ফেরত দেওয়ার অজুহাতে আবারও ওই বাসায় যান। গিয়ে তারা এয়ারপড ফেরত দেন। তখন অপু পানি খাওয়ার কথা বলে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। তখন অপু বাসায় থাকা শাম্মীর স্বামীকে বলেন, শাম্মী বাসায় আছেন। আমরা তাকে পুলিশে দিয়ে দেব। তখন শাম্মীর স্বামী ভয় পেয়ে তাদের টাকা অফার করেন। তখন অপু ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা বাসায় নেই বলে জানান শাম্মীর স্বামী। পরবর্তীতে ১০ লাখ টাকা নিয়ে চলে আসেন এবং সমান ভাগ করেন তারা।

পুলিশের কথা বিশ্বাস করে গ্রেফতার হওয়ার দাবি : জবানবন্দিতে রিয়াদ আরও বলেন, পরবর্তীতে ২৬ জুলাই বিকালে চাঁদার বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায় করতে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সিয়াম, সাদমানকে ওই বাসায় পাঠাই। আর আমি গুলশান মোড়ে অবস্থান নেই। পুলিশ ফাঁদ পেতে আমাকেও ওই বাসায় যেতে বলে। তখন পুলিশের কথা বিশ্বাস করে ওই বাসায় যাই। তখন পুলিশ এসে টাকাসহ হাতেনাতে আমাদের গ্রেফতার করে। আমি গরিবের ছেলে। টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।

আরও পড়ুনঃ  আদালতে ‘চাঁদাবাজ’, ‘চাঁদাবাজ’ স্লোগান—মুখ লুকালেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা

এদিন রিয়াদসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রিয়াদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া অপর তিন আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া অন্যরা হলেন-মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। এছাড়া গত ২ আগস্ট অপর আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জানে আলম অপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে রয়েছেন।

অভ্যুত্থানের কয়েকদিন পরই দামি প্রাইভেটকার নিয়ে গ্রামে যান অপু : জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার রাজধানী থেকে গ্রেফতার হওয়া জানে আলম অপু জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পুনঘরদীঘি গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত আনোয়ার হোসেনের ছেলে। প্রায় ১০ বছর আগে তার বাবা মারা যায়। অপু রাজধানীর গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুনঃ  রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সালমান এফ রহমান

ছাত্রদল নেতা ও অনলাইন অ্যাক্টিভিটস আরমান হোসেন বলেন, অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পরই এলাকায় দামি প্রাইভেট কার নিয়ে এসেছিলেন অপু।

আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দেওয়ান তানভীন নেওয়াজ বলেন, ২০২২ সালের দিকে অপু ছাত্রদল করতেন। নারী কেলেঙ্কারির দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর সে একেক সময় একেক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে এই জেলার তথা আক্কেলপুরের মানুষের মানসম্মান নষ্ট করেছে। আমরা তার শাস্তি দাবি করছি।

জানা যায়, অপুর বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা অন্যত্র বিয়ে করেছেন। তার একমাত্র ছোট বোন মায়ের কাছেই থাকে। অপুর নানার বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামে। নাতি অপুর গুলশানের চাঁদাবাজির কথা শুনেছেন তার নানি আখলাকুন্নেসা বকুল। তিনি বলেন, তার মায়ের বিয়ের পর অপু এখানে আর তেমন আসে না।

অপুর মামি জেসমিন আক্তার বলেন, অপু ঢাকায় অনেক বড় নেতা হয়েছে বলে জানতাম। সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত না। ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছে বলে শুনেছি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ