Tuesday, August 5, 2025

পালানোর আগে হাসিনার কাছে যে অনুরোধ করেছিলেন তাপস

আরও পড়ুন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গতবছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তবে আন্দোলন উত্তালে সরকার পতনের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বেশ কিছু শীর্ষ নেতাকর্মী দেশত্যাগ করার খবর পাওয়া গিয়েছিল।

এদিকে সরকার পতনের দুদিন আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। দেশ ছাড়ার আগে হাসিনার সঙ্গে তাপসের কথোপকথনের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ফোনালাপের রেকর্ডটি প্রথমে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ফেসবুকে পোস্ট করেন।

রেকর্ডটি দুটি অংশে বিভক্ত। সায়েরের দাবি এবং অডিওর দ্বিতীয় অংশের ভাষ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ে গতবছর ৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর যেতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তাপস। কিন্তু তাকে ইমিগ্রেশন আটকে দিয়েছিল। তখন ফুপু প্রধানমন্ত্রীকে কল দিয়ে অফিসারকে তাকে ছেড়ে দিতে বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

আর প্রথম অংশের অডিওতে ২২ জুলাই বেলা ১১.৪৯ মিনিটের বলে দাবি করেছেন সায়ের। যেখানে তাপস মিষ্টি ভাষায় ফুপুকে দেখতে আসার আবদার করেন। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে আসতে বারণ করেন হাসিনা।

আরও পড়ুনঃ  টানা তিন দিনের ছুটি, পাবেন না যারা

সোমবার রাতে নিজের ফেসবুকে আইডিতে রেকর্ডটি পোস্ট করেন সায়ের। ফোনালাপটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রথম অংশ ২২শে জুলাই বেলা ১১.৪৯ মিনিটের বলে দাবি করেছেন সায়ের। যেখানে তাপস মিষ্টি ভাষায় আবদার করছে ‘হাসুমনি, একটু আসতে চাচ্ছিলাম, তোমাকে দেখতে চাচ্ছিলাম, আসব?’ জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসবের মধ্যে আসার দরকার নেই।’ তখন তাপস বলেন, ‘তাহলে (কারফিউ) শিথিল হওয়ার পর আসি?’ হাসিনা বলেন, ‘আমি তখন অফিসে থাকব। ব্যবসায়ীদের ডাকছি তো। ২-৩টার সময়।’ তাপস বলেন, ‘আচ্ছা, তাহলে ওই সময় অফিসে এসে দেখা করে যাব।’

দ্বিতীয় অংশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন তারা। দ্বিতীয়টি ৩রা আগস্ট ২০২৪ সকাল ৮.১৬ মিনিটের বলে দাবি সায়েরের।

আরও পড়ুনঃ  সরাসরি যা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন হাসিনা, চাঞ্চল্যকর অডিও ফাঁস

এই পর্বে ফোন করে তাপস কুশল বিনিময়ের পর বলেন, ‘আমি একটু সিংগাপুর যেতে চাচ্ছিলাম, যাব?’ হাসিনা তাকে যেতেও বলেন। কিন্তু সম্ভবত তিনি জানতেন না তাপস দেশ ছাড়ার সকল প্রস্তুতি নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে তাকে ফোন করেছেন। কেননা শেখ হাসিনা তাকে বলেছিলেন, ‘তিনি মিছিল করতে মানা করেছেন, প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সবাই জমা থাকবে।’ এর উত্তরে তাপস বলেন, ‘আমি এয়ারপোর্টে চলে আসছি। জিও-টা (বিদেশ যাত্রায় প্রয়োজনীয় গভর্নমেন্ট অর্ডার) এখনো হয়নাই বলে এখানে ইয়ে করছে না।’ তখন হাসিনা তাপসকে প্রশ্ন করেন, ‘জিওটা সঙ্গে নিলে না কেন?’ তাপস উত্তরে বলেন, ‘অ্যাপ্লাই করে দিছি, কিন্তু হতে হতে তো ১১টা-১২টা বাজতে পারে, মানে তোমার ওখানে যেতে। তো আমি ইমিগ্রেশনে আসছি, কাউকে ইমিগ্রেশনে বলে দেওয়া যাবে কি? আমার ফ্লাইট এখনি ছেড়ে দেবে।

জবাবে হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, বলা যাবে। ফাইল পাঠাইছো তো? তখন তাপস বলেন, হ্যাঁ, ফাইল প্রমিত মহদোয় পাঠাচ্ছেন। হাসিনা বলেন, ‘আচ্ছা, দিয়ে দাও।’ তখন তাপস হাসিনাকে একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলতে অনুরোধ করে বলেন, ‍এই যে এখানে অফিসার আছেন, ইমিগ্রেশন অফিসার। তখন হাসিনা তাপসের কাছে জানতে চান, কাউকে বলিয়ে দিতে হবে কি না? তাপস বলেন, হ্যাঁ, আমি দিব ফোনটা? হাসিনা বলেন, ‘না না, আমি তার সাথে কথা বলব কেন। আমি অফিসের কর্মকর্তার মাধ্যমে বলিয়ে দিতে পারি।‘ তাপস জানতে চান, কাকে বলব তাহলে? হাসিনা বলেন, ‘আমার সেক্রেটারিকে বললেই হবে, শাহ সালাউদ্দিন।‘ তাপস পুনরায় নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করেন, সালাউদ্দিন সাহেব? শেখ হাসিনা বলেন , হ্যাঁ।

আরও পড়ুনঃ  ইসলামপন্থিদের মিথ্যা জঙ্গি মামলায় ফাঁসিয়ে দমনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে

এদিকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শেখ ফজলে নূর তাপস ও তার স্ত্রী আফরিন তাপসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ