Tuesday, August 5, 2025

দুপুরের আনন্দ-উল্লাস, সন্ধ্যায় নামে বিষাদ

আরও পড়ুন

জুলাই পেরিয়ে আগস্ট। আন্দোলন-সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক পালাবদলে তখন উত্তাল দেশ। তীব্র আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের। ৫ আগস্ট দুপুরে তীব্র জল্পনা শুরু হয়, সেনাপ্রধানের কথায় স্পষ্ট হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের কথা।

তারপরই দেশের ছাত্র-জনতা ফেটে পড়ে খুশিতে-উচ্ছ্বাসে। ক্যালেন্ডারের হিসাবে দিন তখন আগস্ট ৫ হলেও সেই দিনটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা হতে থাকে, ‘নতুন স্বাধীনতার দিন ৩৬ জুলাই’।

২০২৪ সালের সমগ্র জুলাইজুড়ে চলেছে আন্দোলন, যার ব্যাপ্তি ৫ আগস্ট পর্যন্ত গড়িয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ইতি ঘটে। এ আন্দোলনের মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রাণ গিয়েছে বহু শিক্ষার্থীর। সেই আন্দোলন কি শুধুই রাজধানী ঢাকাজুড়ে ছিল? নাহ, সারা দেশে আন্দোলন পাল্লা দিয়ে চলছিল। বাদ যায়নি দুটি পাতার একটি কুড়ির দেশ, সিলেটও।

বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিভাগীয় শহরে ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছিল বেশ সক্রিয়। বিজয়োল্লাসের ছোঁয়া লেগেছিল জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায়।

গত বছরের আজকের এই দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের শহীদ হয়েছিলেন তিন যুবক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাংবাদিক আবু তাহের মোহাম্মদ তুরাবসহ শহীদ হয়েছিলেন সর্বমোট পাঁচজন।

আরও পড়ুনঃ  মধ্যরাতে ডিবি পুলিশের হাতে যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন যুব মহিলা লীগের নেত্রী

সারা দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরে মুহুর্মুহু আনন্দ মিছিলে পুরো শহর ছিল ছাত্র-জনতার দখলে। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি একে একে আনন্দ মিছিলে যোগ দেন রাজনৈতিক নেতারাও। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার ক্ষোভের রোষানলে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের অফিস।

বিকেল হতেই পালটে যায় দৃশ্যপট, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলের পর বিয়ানীবাজার থানা ও উপজেলা চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় থানার ভেতর থেকে গুলি করা হলে থানার বাইরে থেকে রায়হান আহমদ ও ময়নুল ইসলামের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ওইদিনই মধ্যরাতে থানার অভ্যন্তরে তারেক আহমদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়।

দুপুর থেকে শুরু আনন্দ-উল্লাস যেন সন্ধ্যায় গড়াতেই বিষাদে পরিণত হয়। তিনজন নিহতের খবরে বিজয় সুখেও নেমে আসে শোকের আবহ। এ তিন হত্যার ঘটনায় পরবর্তীতে মামলা হলেও এখনো দেখেনি আলোর মুখ বিচার। এ নিয়ে শহীদ পরিবারগুলোতে রয়েছে উদ্বেগ, ক্ষোভ আর হতাশা।

আরও পড়ুনঃ  কিডনি দেওয়ার আগে দোতলা বাড়ি লিখে নেন স্ত্রী, দাবি সাভারের সেই স্বামীর

শহীদ রায়হানের ভাই সিয়াম আহমদ বলেন, ভাই হারানোর এক বছরেও মামলার নেই কোনো অগ্রগতি। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে আমার ভাই হত্যাকারীদের শাস্তি। পরিবর্তিত বাংলাদেশে এক বছরেও বিচারে অগ্রগতি না হওয়ায় ,আমাদের পরিবারের সবার মধ্যেই রয়েছে হতাশা।

বিয়ানীবাজার থানার অভ্যন্তরে উদ্ধার হওয়া শহীদ তারেকের স্ত্রী ছামিয়া আক্তার বলেন, সিআইডিতে যাওয়ার পরও এখনো মামলার অগ্রগতি হয়নি, এ নিয়ে আমাদের হতাশা রয়েছে। আমার স্বামীকে নিয়ে আমি অনেক গর্ব করি। আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমার ছেলে বড় হলে তার বাবার সম্পর্কে গর্ব করে যেন সবাইকে বলতে পারবে—এটাই প্রত্যাশা।

এ তিনজন ছাড়াও বিয়ানীবাজার উপজেলায় আরও দুজন শহীদ হয়েছিলেন জুলাই আন্দোলনে। জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ১৮ জুলাই পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক নয়া দিগন্তের ব্যুরো ও সিলেটের দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার আবু তাহের মোহাম্মদ তুরাব পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এ ছাড়া ঢাকার নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের কাকুরা গ্রামের সোহেল আহমদ নামের আরেকজন মারা যান।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় ৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি হত্যা ও একটি বিস্ফোরক দ্রব্যের মামলা। এসব মামলায় প্রায় দেড় শতাধিক আসামির নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আসামিদের তালিকায় আছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লবসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সাংবাদিকরাও হয়েছেন আসামি।

আরও পড়ুনঃ  ৫ কোটি টাকা চাঁদার দাবিতে যাত্রাবাড়িতে বাস ভাংচুর, যুবদল নেতা দল থেকে বহিষ্কার

পুলিশ বলছে, অনেক আসামি এখনো পলাতক। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিয়ানীবাজার থানার ওসি মো. আশরাফ উজ্জামান বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তারাই চার্জশিটে আসামি হবেন। ইতোমধ্যে অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মুস্তাফা মুন্না কালবেলাকে বলেন, জুলাইয়ের শহীদরা আমাদের অনুপ্রেরণা। তারা আমাদের বৈষম্যহীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারগুলোকে সহায়তা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্ঠা করা হচ্ছে। প্রশাসন তাদের পাশে আছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ