ভারতের সাথে একটি বড় সামরিক সংঘাতে দেশের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির যখন প্রশংসায় ভাসছেন, তখন রাজনৈতিক মহল এবং মিডিয়া পাড়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে: সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট পদের দিকে নজর রাখছেন?
তবে এমন জল্পনা নাকচ করে দিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ জল্পনাকে ‘মনগড়া’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ব্রিটিশ সাময়িকি ইকোনমিস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘সেনাপ্রধানকে ঘিরে এই জল্পনা-কল্পনা ‘ভিত্তিহীন’। সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট পদ চান এমন ধারণার কোনো সত্যতা নেই।’
ভারত যদি আবারো আগ্রাসন চালায় তাহলে পাকিস্তান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাকিস্তান ভারতের আরো গভীরে আঘাত হানার মাধ্যমে শুরু করবে। আমরা পূর্ব দিক থেকে শুরু করব। ভারতকে বুঝতে হবে যে তাদের সব স্থানে আঘাত করার সক্ষমতা আছে পাকিস্তানের।’
এর আগে বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও। তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে পদত্যাগ করতে বলা হতে পারে অথবা সেনাপ্রধানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে, এমন খবর সত্য নয়।
এই ধরনের দাবিকে ‘নিছক জল্পনা’ বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচারিত প্রতিবেদনের কোনো সত্যতা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির কখনোই প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি, এমন কোনো পরিকল্পনাও নেই। আমি, প্রেসিডেন্ট জারদারি ও সেনাপ্রধান আসিম মুনির, আমরা একে অপরের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং পাকিস্তানের অগ্রগতির লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
এ নিয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভীও। পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিক এক এক্স পোস্টে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যে কুৎসিত প্রচার চালানো হচ্ছে, আমরা জানি এর নেপথ্যে কে বা কারা আছে। এই প্রচারণা নির্ভর করে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তির ওপর।’
গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে চারদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর পাক সরকার জেনারেল আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শালের বিরল ও মর্যাদাপূর্ণ উপাধি প্রদান করে। মন্ত্রিসভা অনুমোদিত পদোন্নতির ফলে তিনি পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে এই পদমর্যাদা অর্জন করেন।
এর আগে জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর নিজেকে ফিল্ড মার্শাল ঘোষণা করেন এবং এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট হন। মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেয়ার পরপর তার প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে জল্পনা আরও জোরালো হয়ে ওঠে। তবে পাকিস্তানের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেন, জেনারেল মুনিরের পদোন্নতির কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।
তথ্যসূত্র: জিও নিউজ ও গালফ নিউজ