প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসে পার্সাইড উল্কাবৃষ্টি দেখা যায়। এ বছর ১২ ও ১৩ আগস্ট রাতে দেখা যাবে এই মহাজাগতিক দৃশ্য। উত্তর গোলার্ধের যেকোনো স্থান থেকে এই উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে, এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত এ দৃশ্য দেখা যাবে।
উল্কাবৃষ্টি কেন দেখা যায়
পৃথিবী যখন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তখন সুইফট-টাটল ধূমকেতুর রেখে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে যায়। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো প্রচণ্ড গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে যায়, আর তাতেই সৃষ্টি হয় উল্কাবৃষ্টি।
বাংলাদেশের সেরা স্পটগুলো
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে হলে শহর থেকে দূরে ফাঁকা জায়গায় যেতে হবে। কারণ, শহরের আলোক দূষণ অনেক বেশি। তাই শহরের বাইরে কোনো গ্রাম, অন্ধকার কোনো খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা নদীর পাড় হতে পারে উল্কাবৃষ্টি দেখার চমৎকার স্থান। বাংলাদেশ থেকে উল্কাবৃষ্টি দেখার সেরা স্পটগুলো হলোঃ
কক্সবাজার: শহরের শান্ত পাহাড়ি অংশে গিয়ে দিগন্তে সমুদ্রের সঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন মহাজাগতিক দৃশ্যটি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ: মূল ভূখণ্ডের আলো থেকে অনেক দূরে, যেখানে উল্কা দেখতে অসাধারণ পরিবেশ পাবেন।
রুমা বা থানচি, বান্দরবান: উচ্চতা বেশি ও আলো কম, তাই আকাশ পরিষ্কার দেখা যায়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সিলেট: ঘন বন আলো আটকে রাখে, ফলে আকাশ আরও স্পষ্ট দেখা যায়।
যদি ভ্রমণ সম্ভব না হয়, তবে নিকটবর্তী সবচেয়ে অন্ধকার খোলা জায়গা খুঁজে নিন—গ্রামের প্রান্ত বা নদীর ধারের মাঠ ভালো অপশন হতে পারে।
কীভাবে প্রস্তুত হবেন
চোখকে অন্ধকারে মানিয়ে নিতে অন্তত ২০ মিনিট সময় দিন; ফোনের আলো বন্ধ রাখুন।
একটি চাদর বা ইজি চেয়ার নিয়ে যান, যাতে আরামে শুয়ে আকাশ দেখতে পারেন।
উজ্জ্বল টর্চ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন; অল্প সময়ের আলোও দৃষ্টির মান নষ্ট করে দেয়।
ধৈর্য ধরুন, কারণ উল্কাবৃষ্টি একটানা দেখা গেলেও বিরতিও থাকতে পারে।
কেন এ বছরও দেখার মতো
এ বছরের পার্সাইড উল্কাবৃষ্টি দেখার সবচেয়ে বড় বাধা হলো আকাশের উজ্জ্বল চাঁদ। গত ৯ আগস্ট পূর্ণিমা হওয়ায়, ১১ এবং ১২ আগস্ট রাতেও চাঁদ বেশ উজ্জ্বল থাকবে। উল্কা দেখার জন্য এটি সবচেয়ে খারাপ সময়। কারণ চাঁদের তীব্র আলোয় ছোট উল্কাগুলো চোখে পড়বে না। শুধু সবচেয়ে উজ্জ্বল উল্কাগুলোই দেখা যাবে।
তবে আমেরিকান মিটিওর সোসাইটি জানিয়েছে, এই বছরের ১২-১৩ আগস্ট পার্সাইড উল্কাবৃষ্টির সর্বোচ্চ দেখা মিলবে। তাই অন্ধকার আকাশে প্রতি ঘন্টায় ৫০ থেকে ৭৫টি উল্কা যদি দেখতে নাও পাওয়া যায়, তবুও উজ্জ্বল কিছু উল্কা ঠিকই চোখে পড়বে। এই জন্য সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো, চাঁদের দিকে পিঠ রেখে আকাশের দিকে দেখা। কারণ চাঁদ দক্ষিণ আকাশে নিচে থাকবে, আর উল্কাগুলো যেখান থেকে আসবে, সেই দিকটি অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব দিকে তাকালে চাঁদের আলো চোখে পড়বে না। এতে সহজেই উজ্জ্বল উল্কাগুলোর দেখা যাবে।
উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য কোনো টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন নেই। খালি চোখেই উল্কাবৃষ্টি দেখা যায়। তবে ধৈর্য রাখতে হবে। কারণ, উল্কা কখনো একসঙ্গে নয়, একটি দুটি করে দেখা যায়।