পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, টানা ভারি বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পিডিএমএ’র তথ্যে বলা হয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ২৭৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী ও ১৩ জন শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ২৩ জন—যাদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, চারজন নারী ও দুই শিশু রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রদেশজুড়ে বন্যায় মোট ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩টি আংশিক এবং ১১টি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো সুয়াত, বুনের, বাজৌর, তোরঘর, মানশেরা, শাঙ্গলা ও বাট্টাগ্রাম।
প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর জন্য ৫০ কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বুনেরে ১৫ কোটি, বাজৌর, বাট্টাগ্রাম ও মানশেরায় ১০ কোটি করে এবং সুয়াতে ৫ কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী সাইফ জানান, মোট ১১টি জেলা মেঘ ফেটে বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৩,৮১৭ জন মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এখনো ৩২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলছে। বর্তমানে ৫৪৫ জন উদ্ধারকর্মী ৯০টি গাড়ি ও নৌকা নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।
ব্যারিস্টার সাইফ বলেন, “সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে বুনেরে, যেখানে ১৫৯ জন মারা গেছেন। তবে সেখানে ১০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাজৌরে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বাট্টাগ্রামে ১১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু ১০ জন এখনো নিখোঁজ।”
বুনের জেলা ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার বিভিন্ন অংশে পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। মেঘ ফেটে বৃষ্টি আর টানা বর্ষণে পাহাড়ি উপত্যকাগুলো মুহূর্তেই রূপ নেয় উচ্ছ্বসিত নদীতে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই আকস্মিক বন্যা গ্রামগুলো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, সেতু ভেঙে ফেলেছে, আর পরিবারগুলোকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।
বুনের জেলা সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। সেখানে ২০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অনেকে সন্তানকে আঁকড়ে ধরে রাখলেও প্রবল স্রোতে তারা তলিয়ে গেছেন। পুরো গ্রাম একেবারে বিলীন হয়ে গেছে পানির নিচে। বেঁচে যাওয়া মানুষজন এখন প্রিয়জনদের খুঁজে ফিরছেন মরিয়া হয়ে।