স্পোর্টস ডেস্ক : অভাবের সংসার, ভ্যানচালক বাবার ঘাম ঝরানো পরিশ্রম, চারপাশের কটূ কথা—সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে জায়গা করে নিয়েছেন পঞ্চগড়ের ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। জাতীয় দলের গোলরক্ষক হিসেবে ইতোমধ্যেই দেশের গর্ব হয়ে উঠেছেন তিনি।
লাওসে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব শেষ করে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে সোনালী ফিরেছেন নিজ জেলা পঞ্চগড়ে। ঢাকায় অবতরণের পর জেলা শহর থেকে বাবার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করেই ১৫ কিলোমিটার দূরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে পৌঁছান তিনি। জাতীয় দলের এই ফুটবলারকে বাড়িতে পেয়ে পরিবার-আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। সোনালীর সাফল্যে আপ্লুত হয়ে বাবা ফারুক ইসলাম মিষ্টি বিতরণ করেন এলাকায়।
ফারুক ইসলাম জানান, সংসারের সবটুকু ভরসা তার পুরোনো ব্যাটারিচালিত ভ্যান আর ঘরের জায়গাটুকু। এর মধ্যেই বড় করেছেন তিন সন্তানকে। কিন্তু মেয়ের ফুটবল খেলায় কখনো বাধা দেননি, বরং কষ্ট করে হলেও পাশে থেকেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে দেশ-বিদেশে খেলতে যায়—এটাই আমার গর্ব।’
মাত্র ১৮ বছর বয়সী সোনালীর ফুটবলযাত্রা শুরু স্থানীয় গইচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়। পরে হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন আন্তঃবিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে নজরে আসেন। সেখান থেকেই ভর্তি হন পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমিতে। ২০২৩ সালে মেলে বড় সুযোগ—বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হন। বর্তমানে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনালী জাতীয় দলের পাশাপাশি বিকেএসপিতে গোলরক্ষক হিসেবে নিয়মিত অনুশীলন করছেন।
সোনালী বলছিলেন, ‘বিকেএসপিতে থাকতেই জাতীয় দলে ডাক পাই। এরপর সিনিয়র দলের হয়ে জর্ডানে খেলেছি, যেখানে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও শিরোপা জিতেছি। সর্বশেষ লাওসে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপে রানার্সআপ হয়েছি।’
সোনালির মা মেরিনা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে অনুশীলনে পাঠিয়েছি। কখনো কখনো টাকার অভাবে যেতে পারেনি, তবুও হাল ছাড়েনি। আজ জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে—এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।’
টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান বলেন, ‘সোনালী অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমী। আমি সবসময় ভরসা রেখেছিলাম, সে জাতীয় দলে জায়গা করে নেবে। আমার আশা পূর্ণ হয়েছে।’
সোনালির সাফল্য ছুঁয়ে গেছে এলাকাবসীকেও। হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের মেয়ে সোনালী জাতীয় দলে খেলছে, এ গর্ব শুধু পরিবারের নয়, আমাদের সবার। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ—তার এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হোক।’-ঢাকা পোস্ট