ভারতের ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) অনুমোদিত পাঠ্যবইয়ে জায়গা পেতে চলেছে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংক্রান্ত একটি অধ্যায়। ২০২৫ সালে ২২ এপ্রিল পহেলগামে সংঘটিত হামলার জবাব দিতে এই সামরিক অভিযানটি চালিয়ে ছিল। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। চারদিন পর যুদ্ধবিরতির মধ্যদিয়ে সংঘাতের অবসান ঘটে।
উভয় পক্ষের ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে পড়ানো হবে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের। ‘অপারেশন সিঁদুর : এ সাগা অব ভ্যালার’ (প্রস্তুতিমূলক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য) ও ‘অপারেশন সিঁদুর: এ মিশন অব অনার অ্যান্ড ব্রেভারি’ (মাধ্যমিক স্তরের জন্য)।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর সময় নারী-পুরুষদের আলাদা করে বেছে বেছে পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি করছিল।
এ ঘটনায় অনেক নারী তাদের স্বামীকে হারান। ভারত তাই সামরিক অভিযানটির নাম দেয় ‘অপরেশন সিঁদুর’।
ভারতের পাঠ্যবইয়ে বলা হয়েছে, ‘সিঁদুর’ শব্দটির পেছনে রয়েছে একটি প্রতীকী অর্থ। শহীদ সেনা ও নিহত সাধারণ মানুষের বিধবাদের সম্মান জানাতেই এই নামকরণ।
সিঁদুর বিবাহ, ভালোবাসা ও মর্যাদার প্রতীক। এই নাম দেওয়া হয়েছে তাদের যন্ত্রণা ও শক্তিকে সম্মান জানাতে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন্তব্য করেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর কেবল একটি নাম নয়, এটি কোটি মানুষের আবেগের প্রতিফলন। এটি ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের অটল অঙ্গীকার।’
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, মূলত সিবিএসই বোর্ড এনসিইআরটি অনুমোদিত বই ব্যবহার করে।
ওই সূত্র পিটিআইকে জানিয়েছে, অপারেশন সিঁদুর অধ্যায়টি ৮-১০ পাতার হবে। তাতে মূলত ভারতীয় সেনার গৌরব কাহিনি থাকবে। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর ভারতীয় সেনা কিভাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে, সেই কাহিনি থাকবে।
এ ছাড়া থাকবে দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক নানা তথ্য। শত্রুপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে কিভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়, কূটনৈতিক পদক্ষেপ কিভাবে করা হয়, বইয়ে সে সব বিস্তারিত থাকবে।পাঠ্যবইয়ে স্পষ্টভাবে পাকিস্তানকে পাহালগাম হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে—‘তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এতে জড়িত ছিল। পাকিস্তান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সন্ত্রাস দমনে। ভারত বারবার সন্ত্রাসী শিবির বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যাংশে বলা হয়েছে—‘ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ পাকিস্তানি বাহিনীকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ভেঙে দিয়ে দ্রুত যুদ্ধবিরতি চাইতে বাধ্য করে।’
কাশ্মীরের পহেলগামে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কাশ্মীরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। ওই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং বলে, দেশটি হামলাকারীদের মদদ দিয়েছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং আর্ন্তজাতিকভাবে তদন্তের দাবি করেছে। এ ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নেয়। এরপর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান শাসিত আজাদ কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে বিমান হামলা চালায় ভারত।
২০২৫ সালের ৭ মে রাত ১টা ০৫ মিনিটে ভারতীয় সেনারা ২২ মিনিটের অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করে। বিমানবাহিনী মুরিদকে ও বাহাওয়ালপুরে লস্কর-ই-তৈয়েবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদ ঘাঁটি আঘাত হানে।
পাঠ্য বইয়ে জোর দিয়ে বলা হয়েছে—‘ভারত নিশ্চিত করেছে কোনো সাধারণ নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রতিটি টার্গেট বহুবার যাচাই করা হয়েছিল। কেবল সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতেই আঘাত হানা হয়।’
এদিকে সংঘাতের কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমান ধ্বংসের দাবি করে ভারত। দেশটির বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান আমরা নিশ্চিতভাবে ধ্বংস করেছি। এ ছাড়া একটি বড় (সামরিক) বিমান রয়েছে। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে হামলা করা হয়েছিল।’
ভারতের হামলার পর ‘অপারেশস বুনিয়ানুন মারসুস’ নামে পাল্টা হামলা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। এতে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এবং সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়। সংঘাতের মধ্যেই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দাবি করে, ভারতের পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যার মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান, একটা রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ এবং একটা এসইউ-৩০।
প্রথম দিকে পাকিস্তানের এই দাবি নিয়ে মুখ না খুললেও সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে প্রথমবারের মতো রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা কার্যত স্বীকার করে নেয় ভারত। টানা কয়েকদিনের সংঘাতের পর ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।
সূত্র: এনডিটিভি, বিবিসি, আনন্দবাজার।