পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত বান্দরবানের বর্তমান বাসস্ট্যান্ড থেকে হাফেজঘোনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল যাওয়ার পথে নির্মিত ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য টানেলটি তিন বছর না যেতেই বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে ঝরনার মত পানি বের হচ্ছে। এ টানেলটিতে বিগত সরকারের আমলে উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের যোগসাজশে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত টানেলটি নির্মাণের শুরু থেকেই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে এসেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজু বড়ুয়া গং। তারা তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ওই টানেলের পাহাড় কর্তন করে বছরজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের মাটি বিক্রি করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত টানেলটি নির্মাণের শুরু থেকে ব্যাপক হারে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বর্তমানে এটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তাঁরা বর্তমান সরকারের কাছে এমন পুকুর চুরি দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের অর্থায়নে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এ টানেলটি। টানেল উদ্বোধন হয়েছে বিগত ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর। তবে টানেলটি নির্মাণের ফলে বর্তমান বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজট কমে আসবে বলা হলেও টানেলটি নির্মাণের পর যানজট দ্বিগুণ বেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক জানান, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতি করার লক্ষ্যে এই টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী বীর বাহাদুর। বর্তমানে টানেলটি গাড়ি পার্কিং ছাড়া আর কোনো উপকারে আসছে না। এছাড়া এ বর্ষা মৌসুমে টানেলে বিভিন্ন অংশে পানি পড়ার ফলে টানেলটি দুর্বল হয়ে আসছে। এছাড়া টানেলটির উপরের অংশে পাহাড় থেকে মাটি সরে আসলে টানেলের ছাদ ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইয়াসির আরাফাত দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, টানেলের দুর্নীতির কথা এড়িয়ে গিয়ে তিনি জানান, টানেলের ছাদের উপরে পানি নিষ্কাশনের জন্য যে পাইপ লাইন দেওয়া হয়েছিল, সেই পাইপ লাইনগুলো চুরি হয়ে গেছে। তাই টানেলের ছাদ থেকে পানি পড়ছে এবং টানেলের বৈদ্যুতিক তারও চুরি হয়ে গেছে। পরে গত কয়েকদিন আগে নতুন তার লাগিয়ে নতুনভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু দিনের মধ্যে টানেলটি সংস্কার করে এনইউ’র মাধ্যমে বান্দরবান পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।