Thursday, July 3, 2025

রাতের ভোট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা

আরও পড়ুন

‘সরকার ও বিভিন্ন বাহিনীর চাপে ২০১৮ সালে প্রহসনের নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে, তখন আমি বুঝে গেলাম দিনের ভোট রাতেই হয়ে গেছে। তৎকালীন সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে এসব সংঘটিত হয়েছে।’ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন কথা বলেন।

রাষ্ট্রদ্রোহ ও জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দুই দফায় আট দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-এর পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান কেএম নূরল হুদাকে আদালতে হাজির করেন। এ সময় ‘স্বেচ্ছায়’ জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের জন্য আবেদন করা হয়। এরপর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

আরও পড়ুনঃ  পথসভার যে অভিজ্ঞতা কখনো ভুলবেন না ডা. তাসনিম জারা

জবানবন্দিতে সাবেক এই সিইসি আরও বলেন, ‘আমি তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন দিয়েছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর জানতে পারি, অনেক কেন্দ্রে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আমি আরও জানতে পারি, অনেক ব্যালট বাক্স রাতেই ভরে গেছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তাদের কর্মীবাহিনী দ্বারা দায়িত্বে থাকা পুলিশ, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের সহযোগিতায় এমন কাণ্ড ঘটেছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী।’

তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার লোকদের অন্ধকারে রেখে এমন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোটে অনিয়ম করা হয়েছে। আমি এ নিয়ে অনেক অনুতপ্ত ছিলাম। যেহেতু গেজেট প্রকাশ হয়ে গেছে, তখন আমি নির্বাচন বাতিল করতে পারি না। তখন আমার হাতে ক্ষমতাও নেই। এ বিষয়ে আমি অনেকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছি এবং মিডিয়ার সামনে বলেছি।’

আরও পড়ুনঃ  যেভাবে গ্রেফতার হলেন সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়

তিনি আরও বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা নির্বাচন পরিচালনা করেন। তারা নির্বাচন কমিশনারকে অন্ধকারে রেখে এভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। এ প্রক্রিয়ার পুরোটাই হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের মাধ্যমে। আর গোয়েন্দা সংস্থা আগেই ফিল্ড দখল করে দিনের ভোট রাতে করতে সহযোগিতা করছে।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার ভাগিনা এসএম শাহজাদা সাজু আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেন। এ বিষয়ে তিনি জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার ভাগিনা নির্বাচন করেছিল, তবে ভাগিনার নির্বাচনে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। কিন্তু সে যেহেতু আমার ভাগিনা, সেক্ষেত্রে কিছুটা প্রাধান্য পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তা তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীনের অধীনে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। অ্যাডমিন অফিসাররাই রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার থাকেন। তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন কোনো না কোনোভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আমার একার পক্ষে কিছুই করার ছিল না।’

আরও পড়ুনঃ  ‘আ.লীগ কখনই শোধরাবে না, সুযোগ পেলে আগের চেয়েও ভয়ঙ্কর হবে’

সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, ২২ জুন নূরুল হুদাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এরপর শুক্রবার তাকে আবারও চারদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। অপরদিকে ২৫ জুন মগবাজার এলাকা থেকে আরেক সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে রোববার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ