দেশে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই ভয়াবহ দাবানলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। গ্রিস, তুরস্ক, ফ্রান্স ও সিরিয়া সহ একাধিক দেশে দাবানলের প্রকোপ বাড়ায় জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং ব্যাপকভাবে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত গরম, শুষ্ক আবহাওয়া এবং প্রবল বাতাসের ফলে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রিসের ক্রেত দ্বীপ, তুরস্কের আনাতোলিয়া উপকূলীয় অঞ্চল, ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চল এবং সিরিয়ার উপত্যকা অঞ্চলগুলোতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
স্পেন থেকে ইতালি পর্যন্ত দেশগুলোতে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রত্যেকটি দেশের প্রশাসন। বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় চিকিৎসা সহায়তা ও জরুরি পরিষেবার দল মোতায়েন করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই ধরনের তীব্র তাপদাহ এখন ঘন ঘন ও তীব্রভাবে দেখা দিচ্ছে।
তুরস্কে ভয়াবহ পরিস্থিতি
তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলের ইজমির প্রদেশে রোববার দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিস ও আকাশপথে কার্যক্রম চালু রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে দেশটির সেফেরিহিসার জেলার পাঁচটি এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে খরায় তুরস্কের ৬০০ অধিক স্থানে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাতদিন কাজ করছে দমকল বাহিনী। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন, এসব দাবানলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
ইজমির প্রদেশে দাবানলে কমপক্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশের দোরতইল উপকূলে দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
গ্রিস, ফ্রান্স ও স্পেনে জরুরি অবস্থা
গ্রিসের দক্ষিণ ইভিয়া অঞ্চলে শুক্রবার রাত থেকে দাবানল শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৬০ জনের বেশি দমকলকর্মী, ৪৬টি অগ্নিনির্বাপক যান ও পাঁচটি বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া আগুনের কারণে দুটি গ্রাম খালি করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানী এথেন্সের কাছাকাছিও দাবানলের খবর পাওয়া গেছে।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের করবিয়ের অঞ্চলে দাবানল দেখা গেছে, যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। একটি ক্যাম্পসাইট ও একটি ঐতিহাসিক অ্যাবি খালি করে দেওয়া হয়েছে।
দেশটির আবহাওয়া সংস্থা মেটিও ফ্রান্স জানিয়েছে, সোমবার ১০১টি বিভাগের মধ্যে ৮৪টিকে ‘কমলা সতর্কতা’তে (অরেঞ্জ অ্যালার্ট) রাখা হয়েছে।
স্পেনের একাধিক অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া সংস্থা এইএমইটি। মাদ্রিদের ৩২ বছর বয়সি ফটোগ্রাফার দিয়েগো রাদামেস বলেন, ‘এই সময়ের জন্য এটা স্বাভাবিক কোনো গরম নয়। দিনকে দিন মাদ্রিদ আরও গরম হয়ে উঠছে।’
ইতালি ও পর্তুগালেও বিপদজনক অবস্থা
ইতালির রোম, মিলান ও নেপলসসহ ২১টি শহরে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। জরুরি বিভাগগুলোতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইতালিয়ান সোসাইটি অব এমার্জেন্সি মেডিসিনের মারিও গুয়ারিনো।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে সোমবার রাত পর্যন্ত ‘রেড ওয়ার্নিং’ জারি করা হয়েছে। দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ অংশেই দাবানল ও তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি রয়েছে। সিসিলি দ্বীপে শুধু শনিবারেই ১৫টি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এই ধরনের তীব্র তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন এবং ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
ইতালির পরিবেশ সুরক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী এমানুয়েলা পিয়েরভিতালি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ভূমধ্যসাগরে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ও তীব্র হয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের আরও চরম আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’