Tuesday, July 8, 2025

রুহুল্লাহ খামেনিকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন

আরও পড়ুন

ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস! যাকে দুনিয়া থেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন, তার কিছুই করতে পারেননি ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। উল্টো ইরানের বিপ্লবের সেই নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনি ঠিকই বেঁচেছিলেন, ছিলেন বহাল তবিয়তে। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও সাদ্দামের পরিণতি হয় ভয়াবহ।

সেদিন খামেনিকে হত্যা করতে পারলে হয়তো ইরানে আসতই না ইসলামিক শাসন। আবার ভয়াবহ ইরান-ইরাক যুদ্ধ থেকেও রক্ষা পেত মধ্যপ্রাচ্য। তবে ইতিহাস বদলানোর সেই সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি সাদ্দাম।

সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর তার ফল ভোগ করতে হয়েছে দশকের পর দশক। এমনই এক মুহূর্ত ছিল ১৯৭০-এর দশকে। ওই সময় ইরাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ইরানের রাজা শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে সে সময় এক অবিশ্বাস্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তার প্রস্তাবটি ছিল, আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করা। খামেনি তখন নির্বাসিত এক ধর্মগুরু, যিনি ইরাকের নাজাফের এক ধুলোমাখা কোণ থেকে পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

১৯৬৪ সাল থেকে খামেনি ইরান থেকে নির্বাসিত ছিলেন। এই নির্বাসনই যেন পরবর্তীকালে ইরানের বিপ্লবের বীজ বুনেছিল। শাহ হয়তো আশা করেছিলেন যে, নির্বাসিত খামেনি ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাবেন। কিন্তু ঘটল ঠিক উল্টোটা! ইমাম আলীর মাজারের পাশেই একটি সাধারণ বাড়ি থেকে খামেনি তার বিপ্লবী ভাষণগুলো ক্যাসেট টেপে রেকর্ড করতেন। এরপর সেই টেপগুলো সীমান্ত পেরিয়ে গোপনে ইরানে পাচার করা হতো। এই টেপগুলো, বাজার ও মসজিদে বিতরণ করা হতো, খুব দ্রুতই সেগুলো রাজনৈতিক বিস্ফোরকে পরিণত হয়। খামেনির প্রভাব বাড়তে থাকলে উদ্বেগও বাড়তে থাকে সাদ্দামের।

আরও পড়ুনঃ  হাসপাতালে সবার সামনে তরুণীকে নির্মমভাবে হত্যা, ভিডিও করলেন চিকিৎসক

ইরানের নির্বাসিত, তৎকালীন গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক সদস্য ও খামেনির জীবনীকারদের মতে, এই প্রস্তাবটি খুব গোপনে দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, সাদ্দাম হোসেন জাতিসংঘে এক গোপন বৈঠকের সময় এই বার্তা পাঠিয়েছিলেন ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির কাছে। সাদ্দাম হোসেন খামেনিকে হত্যার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কারণ তিনি আশঙ্কা করছিলেন খামেনি ইরাকের শিয়া সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করে বিদ্রোহ সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু শাহ এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে জড়াতে রাজি হননি। তার স্পষ্ট জবাব ছিল, তারা ধর্মগুরুদের হত্যা করার কাজে জড়িত নয়। যদিও তিনি ইরাকিদের অনুরোধ করেন, যেন তারা খামেনিকে দেশ থেকে বের করে দেয়। তবে শাহের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ কেউ এটিকে নৈতিক সংযম মনে করেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন শাহ নিজেকে একজন আধুনিক শাসক হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, কোনো মাফিয়া সদস্য হিসেবে নয়।

আরও পড়ুনঃ  ২৬ ফুট অজগরের পেট থেকে উদ্ধার হলো কৃষক, যা জানা গেল

অবশেষে ১৯৭৮ সালে ইরানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বৃদ্ধি এবং নতুন করে ইরানি চাপের মুখে সাদ্দাম খামেনিকে ইরাক থেকে বহিষ্কার করেন, এই আশায় যে, এটি সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু ঘটেছিল উল্টোটা। ফ্রান্সে নির্বাসিত হয়ে খামেনি অবাধ গণমাধ্যম অ্যাক্সেস পান এবং তার বার্তা সারা ইরানে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র চার মাসের মধ্যে শাহের পতন হয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ