সদ্য প্রকাশিত একটি ভিডিও ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিশুদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এতে ইঙ্গিত মিলেছে, তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে সাম্প্রতিক আত্মঘাতি হামলাটি কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং অভ্যন্তরীণ গোপন অনুপ্রবেশের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকতে পারে এটি।
‘‘দ্য সানস অব রুহুল্লাহ’’ পরিচয় দেওয়া একটি গোষ্ঠী অনলাইনে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। এই ফুটেজে ২০২৫ সালের ১৭ জুন ভোরে ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা কমান্ড সেন্টারের ভিতরে রিয়েল-টাইম অপারেশন চিত্র দেখানো হয়েছে, যখন ইরানের পক্ষ থেকে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির উপর দশম ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চলছিল।
ভিডিওতে ইন্টারসেপ্টরের (প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) পথ পরিবর্তন এবং দূর-নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমে ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপ দেখা গেছে।
ফুটেজে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন:‘‘আক্রমণের সময় আমরা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ছিলাম।আমরা সিস্টেমটিকে ভেতর থেকে পরিচালনা করেছিলাম। স্ব-আক্রমণ কোনও ভুল ছিল না; এটি একটি সিদ্ধান্ত (অনুপ্রবেশ) ছিল।’’
স্বতন্ত্র বিশ্লেষকরা ফুটেজটির সত্যতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সঠিক ইন্টারফেস ডিজাইন, লাইভ টেলিমেট্রি ফিড এবং কার্যকরী ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কনসোলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কমান্ড-লাইন সিকোয়েন্সের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। যদি যাচাই করা হয়, তাহলে এই লঙ্ঘনটি শাসকগোষ্ঠীর সবচেয়ে সুরক্ষিত সামরিক অবকাঠামোর ঐতিহাসিক অনুপ্রবেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
১৩ জুন শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে তেল আবিব এবং আশেপাশের সামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে ইরানের একটি বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় এই ঘটনাটি ঘটে।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিংসহ ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। তবে, ইসরাইলের ছোড়া একটি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাখ্যাতীতভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে তেল আবিবের ভেতরে আঘাত হানে- যা তাৎক্ষণিকভাবে জল্পনা-কল্পনার জন্ম দেয়।
প্রাথমিক ইসরায়েলি প্রতিবেদনে এই ব্যর্থতার জন্য ‘পথ বিশ্লেষণ অ্যালগরিদম ত্রুটি’কে দায়ী করা হয়। অন্য কিছু প্রতিবেদনে ‘সংকেত হস্তক্ষেপ’ এবং ‘সিস্টেমের অসঙ্গতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে এই ভিডিওটি বর্ণনাকে নাটকীয়ভাবে বদলে দিয়েছে। অনেকেই এখন ইচ্ছাকৃত অভ্যন্তরীণ নাশকতার ফলে স্ব-প্ররোচিত হামলা হিসেবে দেখছেন এটিকে।
ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। পর্যবেক্ষকরা এখন ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ইতিহাসের পূর্ববর্তী ব্যর্থতাগুলি পুনর্বিবেচনা করছেন। ২০২৩ সালের মে মাসে, গাজা থেকে ছোড়া ৪০টিরও বেশি রকেট বাধা অতিক্রম করে এবং একটি ইসরায়েলি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র একটি বেসামরিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। সেই সময় কর্মকর্তারা ‘গতিপথের ভুলহিসাব’ বলে দোষারোপ করেছিলেন। এক মাস পরে, ২০২৩ সালের জুন মাসে ইসরায়েলের অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ভুল করে গোলান হাইটসের উপর একটি বন্ধুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করে। এই ঘটনাটিকেও ‘বন্ধু বা শত্রু সংকেত ত্রুটি’ হিসাবে খারিজ করে দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এখন যুক্তি দিচ্ছেন, এই ঘটনাগুলি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর মধ্যে গোপন হস্তক্ষেপের একটি বিস্তৃত ধরণ হতে পারে। একইসাথে, তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, একসময়ের গর্বিত আয়রন ডোম পূর্বের স্বীকার করা সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে অভ্যন্তরীণ ত্রুটির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বিষয়টি প্রকাশের মানসিক প্রভাব ইতিমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাইজ্যাক করে তাদের নিজস্ব জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত করার আশঙ্কা রয়েছে, যা ইসরায়েলি আত্মবিশ্বাসকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। অপ্রতিরোধ্য শত্রুর গুলিবর্ষণে নয় বরং নীরব, অভ্যন্তরীণ কমান্ড দ্বারা এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তদন্ত অব্যাহত থাকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি অজানা রয়ে গেছে: যেমন- কে অনুপ্রবেশের পরিকল্পনা করেছিল? কতক্ষণ ধরে সিস্টেমটি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে? এবং একই রকম লঙ্ঘন আবার ঘটতে পারে কিনা?
আপাতত, আয়রন ডোম এখনও কার্যকর থাকতে পারে। তবে অনেক পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে এর বিশ্বাসযোগ্যতা বাইরের চাপের কারণে নয়, বরং ভেতরের ফাটলের কারণে ভেঙে পড়েছে।