Tuesday, July 22, 2025

অপরাধের শীর্ষে এখন ৩ শহর ভয়ে মুখ খুলছেন না অনেকেই

আরও পড়ুন

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা—দেশের তিন প্রধান শহর এখন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একসময় নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অপরাধ সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন পুরো শহরগুলোই অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।

ঢাকা

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ৭ হাজার ৮২৭টি অপরাধের মামলা রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সদরঘাট, মুগদা, যাত্রাবাড়ী, রূপনগর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা ও মিরপুর এলাকাগুলো অপরাধের হটস্পটে পরিণত হয়েছে।

অপরাধ বিজ্ঞানী ড. তৌহিদুল ইসলামের মতে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কেবল পুলিশি অভিযানই যথেষ্ট নয়। কমিউনিটি পুলিশিং, বিচারব্যবস্থার গতিশীলতা এবং তরুণদের জন্য খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রয়োজন।

মোহাম্মদপুর এলাকায় কিলার বাদল ও তার সহযোগী কিলার লাল লাল্লু এখনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে। বাদলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিশোর গ্যাং নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে ঘাট বাবু, ভাঙ্গারি রনি, লম্বু মোশারফ, গ্যারেজ সোহেল ও চাপাতি কাইয়ুমের মতো সন্ত্রাসীরা সক্রিয়।

আরও পড়ুনঃ  উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা বার্ন ইনস্টিটিউটের এক চিকিৎসকের আবেগঘন বর্ণনা

১৮ মে জাপান গার্ডেন সিটির কাছে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ী আবু আলেমকে কুপিয়ে আহত করেছে চাপাতি কাইয়ুম। ২৭ মে একই এলাকায় ব্যবসায়ী সাব্বির আহমেদের ওপর হামলা হয়। ভয়ে কেউই মামলা করার সাহস পাচ্ছে না।

মিরপুরের কাফরুল ও ভাসানটেক এলাকায় ইব্রাহিমের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা চলছে। পল্লবী, মিরপুর-১০ ও ১১-এ শাহাদত ও মুক্তারের নিয়ন্ত্রণে নজরুল ইসলাম নজু, লালন, শাহীন ও মনারের মাধ্যমে অপরাধ চলছে। শনিবার (১২ জুলাই) মিরপুর ১১-এর বড় মসজিদের সামনে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি ও ফুটপাত দখল অপরাধের প্রধান রূপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২৫ সালে এখানে কমপক্ষে ১২০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ইয়াবা ও আইসের মতো মাদক নগরীর অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে, যা তরুণদের মধ্যে ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা বাড়াচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য নগরীতে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এই গ্যাংগুলো ছিনতাই, মারামারি এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত।

আরও পড়ুনঃ  জুলাই হত্যাকাণ্ডের গোপন কল রেকর্ড, ফরেনসিকে ৩ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মৌমিতা পাল বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা, সামাজিক অবক্ষয়, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক প্রভাব অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তিনি সুস্থ বিনোদন, কর্মসংস্থান ও অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন।

খুলনা

খুলনা একসময় নিষিদ্ধ চরমপন্থিদের আশ্রয়স্থল ছিল। এখন এখানে প্রকাশ্যে খুনাখুনি নগরবাসীর মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করছে। গত ১০ মাসে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে ৮টি আধিপত্য দ্বন্দ্বের কারণে। মাদক ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে ২৭ জুন রূপসার রাজাপুরে তিন যুবককে গুলি করা হয়, যাতে সাব্বির নামে একজন নিহত হন।

১১ জুলাই যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গুলি ও রগ কেটে হত্যা করা হয়। বিএনপি এটিকে রাজনৈতিক খুন বলে দাবি করেছে। নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  ১ বছর আগে বিয়ে করেন বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট তৌকির

২৩ জানুয়ারি ময়লাপোতা মোড়ে সাদিকুর নামে আরেক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যার ঘটনায় পুলিশি তদন্তে মাদক ব্যবসাসংক্রান্ত এলাকাভিত্তিক ভাগাভাগি বা অধিপত্যকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শাহীনুল হক শাহীনকে ১৬ মার্চ গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি চরমপন্থি নেতা শহীদ ওরফে হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ৯ জানুয়ারি চরমপন্থি দ্বন্দ্বে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে খুন হন খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু। তিনিও চরমপন্থি নেতা হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর ভেঙে পড়া পুলিশি মনোবল চাঙা করে মাঠে সক্রিয় হওয়াটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এখন মাঠে বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয়।

তথ্যসূত্র- দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ