Tuesday, July 22, 2025

জানালার পাশে ঝুলছিল শিশুদের হাত, দেহগুলো পড়েছিল নিচে

আরও পড়ুন

শিশু শিক্ষার্থীদের মৃতদেহগুলো পড়েছিল শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চে। দেহগুলো পুরো আটকে ছিল সেখানে। সহজেই তা উঠাতে পারছিলেন না উদ্ধারকর্মীরা।

যারা বেঁচে ছিল তীব্র যন্ত্রণায় তাদের কোনো চেতনাই ছিল না। কোনো একদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পুড়ছিল পুরো শরীর। অনেক শিশু বাঁচার চেষ্টা করছিল। যারা জানালার দিকে ছিল, তাদের হাত ঝুলছিল। দেহগুলো পড়েছিল নিচে। প্রতিটা জানালার সঙ্গে কোনো না কোনো পোড়া হাত লেগেছিল। মাথার চুল থেকে শুরু করে পুরো চামড়া পুড়ে গেছে।

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে সোমবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর এমনই দৃশ্য দেখেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী মাহাথির মোহাম্মদ আদিব।

জানালার পাশে ঝুলছিল শিশুদের হাত, দেহগুলো পড়েছিল নিচে

দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া আদিব ও তার বন্ধুরা সোমবার দুর্ঘটনার পরপর ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। এতে আতিবের দুই হাত কিছুটা পুড়ে গেছে। ব্যান্ডেজ বেঁধে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে চলে আসেন তিনি।

আদিবের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে প্লেনটা এসে ঢোকে। তখন আমি ক্যান্টিনের ওখানে ছিলাম। খাবার নিয়ে আসছিলাম। তখন দেখি এই বরাবর প্লেনটা এসে বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে যায়। ঢোকার পর প্রথমে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের পর ট্যাংকের যে ফুয়েল ছিল, সেটার কারণে আবার বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের পর অক্সিজেন ট্যাংক ছিল, ওই ট্যাংকে আবার বিস্ফোরণ হয়। আগুনটা চতুর্দিকে ছড়াইয়ে পড়ে। ব্লাস্টের কারণে যারা পড়ে যায় তাদের মাঠের মধ্যে এনে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস এসে এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আমরা ভেতরে ঢুকি। ঢুকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে রেসকিউ অপারেশনে কাজ শুরু করি।

আরও পড়ুনঃ  শাহবাগের ‘প্রজন্ম চত্বর’ ভাঙল সিটি কর্পোরেশন, ফেসবুকে দায় চাপল জামায়াতের ওপর

উদ্ধারের সময় কী কী দেখলেন, জবাবে মাহাথির মোহাম্মদ আদিব বলেন, ‘যারা মারা গেছিল বেঞ্চের ওপর পড়ে আছিল। ওদের বডিগুলো পুরো আটকে গেছিল, উঠতেছিল না। যারা বেঁচে ছিল তারা একদম সেন্সলেস অবস্থায়, যে কোনো একদিকে তাকাইয়া পুড়তেছে, কোনো হিতাহিত জ্ঞান নাই। অনেক বাচ্চা বাঁচার চেষ্টা করতেছিল। যারা জানালার দিকে ছিল, ওদের হাত ঝুলতেছে, বডিগুলো নিচে পড়েছিল। প্রত্যেকটা জানালার সঙ্গে হাত লেগেছিল, চামড়াসহ যা ছিল। পুরো বিল্ডিংয়ে কোনো একটা জায়গায় রক্ত নাই। সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। যারা নিচের দিকে ছিল, সরি টু সে একটা মন্ডে পরিণত হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুনঃ  এইমাত্র পাওয়া: শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের আউট

উদ্ধার করে কিভাবে বাইরে নিয়ে আসলেন? আদিব বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস পানি নিয়ে সামনে আগাচ্ছিল, দরজার মধ্যে পানি দিচ্ছিল। আমরা দরজা ভাঙছিলাম। দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে স্টুডেন্টদের ওপর পানি ঢালছিল ফায়ার সার্ভিস। আমরা স্টুডেন্টদের টান দিয়ে বের করছিলাম।’

জানালার পাশে ঝুলছিল শিশুদের হাত, দেহগুলো পড়েছিল নিচে

উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া প্রসঙ্গে আদিব বলেন, ‘যারা আহত ছিল হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানো গেছে কিনা বলতে পারছি না। আমরা ছয়জনকে উদ্ধার করেছিলাম। ওই ছয়জনের মধ্যে দুজন বাঁচতে পারবে, বাকি চারজন বাঁচার মতো ছিল না। বডি ৯০ শতাংশের ওপরে জ্বলে গিয়েছিল। চামড়া ছিল না, মাথার চুল ছিল না। গালের চামড়া সব কিছু শেষ।’

উদ্ধারের পর বেশ ট্রমার মধ্যে পড়েছেন আদিব। বলেন, ‘চোখে আর পানি আসতেছে না। কালকে কাঁদতে কাঁদতে চোখ শুকাইয়া গেছে। আর কিছু বলার নাই। যা দেখছি এটা ভোলার মতো না।’

আরও পড়ুনঃ  রাষ্ট্রীয় শোকের কারণে মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানাল উপদেষ্টা আসিফ

এই ধরনের প্রশিক্ষণ চলা উচিত কি উচিত না? আদিব বলেন, ‘এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব প্রশিক্ষণ চলা একদম উচিত না। তাও আবার একটা স্কুল কলেজের ওপর দিয়ে চলার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না। এখানে ছোট ছোট বাচ্চারা পড়ে, স্টুডেন্টরা পড়ে। ক্লাস ছুটি হয়েছিল ১০ মিনিট আগে। ১০ মিনিট আগে যদি বিমানটা এসে পড়তো মিনিমাম ৪০০ জনের মতো ইনস্ট্যান্ট ডেথ হয়ে যেতো।’

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৭৮ জন। তাদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

জানালার পাশে ঝুলছিল শিশুদের হাত, দেহগুলো পড়েছিল নিচে

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা অব্যাহতভাবে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কিছু রোগীর অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ