গাজায় শুধু খাদ্য নয়, নিহতদের দাফনে মিলছে না কাফনের কাপড়টুকুও। হাসপাতালের বিছানার চাদর, জানালার পর্দা আর পুরানো কম্বল- এসবই এখন গাজাবাসীর ভরসা। মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গাজায় নির্যাতন আর বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করছে দখলদার বাহিনী। প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে। লাশের সারি এতই দীর্ঘ যে, কাফনের কাপড়েও টান পড়েছে।
স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে খাদ্য, পানির সঙ্গে কাফনের কাপড়ও মিলছে না উপত্যকায়। নিরুপায় হয়ে দাফনকার্যে ব্যবহার করা হচ্ছে হাসপাতালের বিছানার চাদর ও জানালার পর্দা। শত শত নিহতদের দাফনে এগুলোই এখন তাদের শেষ ভরসা।
ইসরাইলি বাহিনী কাফন তৈরির কারখানাগুলোও ধ্বংস করে দিয়েছে। গত পাঁচ মাস ধরে গাজার সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সহায়তা- কিছুই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
গাজার হাসপাতালে শহীদদের গোসল এবং দাফনকারী স্বেচ্ছাসেবকরা জানিয়েছেন, মরদেহ দাফনের জন্য সঠিক কাফনের কাপড়ের তীব্র অভাব। তারা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সাদা রং শান্তি আর পবিত্রতার প্রতীক হলেও এই রং গাজাবাসীর জন্য যেন আতঙ্কের। গাজার অলিগলি এখন মরদেহবাহী সাদা ব্যাগের ছায়ায় ঢাকা। প্রতিদিনই ইসরাইলি বর্বরতায় প্রিয়জনদের সাদা কাফনে মুড়িয়ে বিদায় জানাতে হয় ফিলিস্তিনিদের।
একজন বলছিলেন, ‘সাদা ব্যাগ এখন আতঙ্কের প্রতীক হয়ে গেছে। পঞ্চাশ, সত্তর, একশ শহীদের ভিড়ে আজ সাদা রঙটাই অপয়া মনে হয়। আমার নিজের সাদা জালাবিয়া পড়তেও ভয় লাগে।’
গাজার মৃতদেহ ধোয়া আর কাফনে মুড়ে দেওয়ার কাজ করেন কিরাতান দাতব্য সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক আবদুল করিম আবু জাসের। অনেকদিন আগেই কাফনের কাপড় ফুরিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
৫২ বছর বয়সি ফুয়াদ আল-সৌসি নিজের হাতে কাফনের কাপড় তৈরি করেন। কয়েক মাস আগেই ইসরাইলি অভিযানে ধ্বংস হয়ে যায় তাদের কাফন তৈরির ঘর। আল-শিফা হাসপাতালের সেই ভবনে আগুন দেয় ইসরাইলি বাহিনী। তারপরও থেমে থাকেননি ফুয়াদ। নতুন করে শুরু করেছেন কাফন তৈরির কাজ।
কিন্তু প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণে তার পক্ষে এত কাফনের কাপড় তৈরি সম্ভব নয়। যেমনটা তিনি বলছিলেন, ‘সম্প্রতি এখানে শহীদের সংখ্যা প্রতিদিন ৭০, ৮০ ও ১০০ জন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবাইকে দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত কাফনের কাপড় নেই।’
তিনি বলেন,
অনেক সময় হাসপাতালের বিছানার চাদর, জানালার পর্দা কিংবা কম্বল দিয়েই কাফন করেছি। যেভাবেই আসে, সেভাবেই ঢেকে দিয়েছি শহীদদের।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ৫৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সামরিক অভিযানের ফলে গাজা ছিটমহলটি ধ্বংস হয়ে গেছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।