Thursday, July 24, 2025

ইরানের আকাশে জ্বালানি ফুরিয়ে যায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের, তারপর…

আরও পড়ুন

ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশে উড়ছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান- তীব্র উত্তেজনার সে মুহূর্তে হঠাৎই দেখা দেয় বিপর্যয়। ইরানের আকাশসীমার গভীরে গিয়ে একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি ট্যাংকে ত্রুটি ধরা পড়ে। সামনে তখন মাত্র দুটি পথ খোলা- জরুরি অবতরণ কিংবা মাঝ আকাশে রিফুয়েলিং। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল, পাইলটের সামনে দাঁড়িয়ে ভয়াবহ এক সিদ্ধান্তের মুহূর্ত।

কঠিন সে পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিতে সক্ষম হন ইসরায়েলি সেই পাইলট। শেষ মুহূর্তে জরুরি রিফুয়েলিংয়ের মাধ্যমে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় বিমানটি। সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তা এবার প্রকাশ্যে আনল ইসরায়েলি গণমাধ্যম।

শনিবার (১৩ জুলাই) ইসরায়েলের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ১২’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানের অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সময় ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান জ্বালানি ট্যাংকের সমস্যার সম্মুখীন হয়। তখন যুদ্ধবিমানটি ইরানের গভীর ভেতরে প্রবেশ করে ফেলেছে এবং পাইলট তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতির কথা নিয়ন্ত্রণকক্ষকে জানায়।

আরও পড়ুনঃ  নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা আনল হুতি, বিপাকে ইসরায়েল

এই মিশনের সময় ইসরায়েলি বিমানগুলোকে কোনো আকাশভিত্তিক রিফুয়েলিং (জ্বালানি সরবরাহকারী) বিমান সঙ্গ দিচ্ছিল না। তাই দ্রুতই একটি রিফুয়েলিং প্লেন পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়।

রিফুয়েলিং প্লেন সময়মতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে যুদ্ধবিমানটিকে ইরানের প্রতিবেশী কোনো দেশে জরুরি অবতরণ করতে হতে পারত এমন একটি বিকল্প পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছিল। তবে প্রতিবেদনটি সেই নির্দিষ্ট দেশের নাম প্রকাশ করেনি।

শেষ পর্যন্ত রিফুয়েলিং প্লেন সময়মতো পৌঁছে যায় এবং সফলভাবে জ্বালানি সরবরাহ করে বিমানটিকে রক্ষা করে। চ্যানেল ১২ জানায়, এই মিশনটি শেষ পর্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয় এবং আর কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়নি।

আরও পড়ুনঃ  ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের ফাঁসির আদেশ স্থগিত, জানা গেল কারণ

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৩ জুন ইরানের উপর আকস্মিক হামলা শুরুর আগে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর প্রধান টোমার বার অভ্যন্তরীণ সভায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, যুদ্ধের প্রথম ৭২ ঘণ্টায় ইসরায়েলের ১০টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু ঘটেনি।

অন্যদিকে, ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করেছিল, তাদের বাহিনী দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং একজন পাইলটকে আটক করে। তবে ইসরায়েলের আরবি ভাষার মুখপাত্র অভিচাই আদরায়ি এই দাবি নাকচ করে বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

ইসরায়েলের দাবি, তারা ইরানের সামরিক কমান্ড, পরমাণু বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের ওপর হামলা চালিয়েছে। কারণ, তাদের মতে, ইরান ইসরায়েল ধ্বংসের জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল এবং পারমাণবিক অস্ত্রায়নের পর্যায়ে পৌঁছানোর খুব কাছাকাছি ছিল।

আরও পড়ুনঃ  নার্স প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে

তবে ইরান বরাবরই পরমাণু অস্ত্র বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তেহরান বলছে, তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যদিও আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশে বাধা এবং উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরানও পাল্টা আঘাত হানে। তারা ৫০০-এর বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ১,১০০ ড্রোন ছোড়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে। এসব হামলায় ২৮ জন নিহত ও ৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন বলে ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়।

এই হামলাগুলোর মধ্যে ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি ড্রোন জনবসতিতে সরাসরি আঘাত হানে। এতে ২,৩০৫টি বাড়ি, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১৩ হাজারের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পড়ে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ