টানা ১২ দিনের সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধ শেষে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আবারও আলোচনার টেবিলে বসতে ইরানের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে এবার তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে ইউরোপের ক্ষমতাধর তিন দেশ—ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি (ই থ্রি)। গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ সমঝোতার কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের হুমকি দিয়েছে তারা।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন ওই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলও। গত মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাতের পর এই প্রথমবারের মতো ইরানের সঙ্গে বৈঠক করলেন পশ্চিমা নেতারা।
ফোনালাপের পর এক ফরাসি কূটনৈতিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং যাচাইযোগ্য পারমাণবিক চুক্তি করার জন্য ইরানকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।
২০১৫ সালে পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ক যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল ইরান, সেখানে অপর পক্ষে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং জার্মানিও ছিল। এ চুক্তির আওতায়ই তখন পরমাণু কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতার বিনিময়ে তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে প্রস্তাবে এই চুক্তি অনুমোদিত হয়েছিল, তা আগামী ১৮ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। এর আগে ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে ইরানের ওপর পুরোনো সব নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ইউরোপীয় দেশগুলো বহুবার সতর্ক করেছে যে, নতুন পরমাণু চুক্তি না হলে এই স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া বহাল করবে তারা। ফরাসি কূটনৈতিক কর্মকর্তার ভাষায়, গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ এমন কোনও চুক্তির পথে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে মন্ত্রীরা এই স্ন্যাপব্যাক ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন।
অবশ্য দৃশ্যমান অগ্রগতি বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা ওই কর্মকর্তা খোলাসা করেননি।
এদিকে মার্কিন ও ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ইরান ছেড়ে গেছেন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা। দেশটি আলোচনায় রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও ওয়াশিংটন-তেহরান পরমাণু আলোচনার ষষ্ঠ দফা শিগগির শুরু হওয়ার কোনও লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
তবে, ইরানের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ কৌশল সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, সমঝোতার জন্য ইরানকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ই-থ্রি। তবে, ইরান আলোচনায় পুরোদমে ফিরলেও মাঠে পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে এই সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত সমাধান অসম্ভব।