সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কাল শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। সংগঠনটির দাবি, অংশগ্রহণের দিক থেকে এটিই হতে যাচ্ছে দলের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সমাবেশস্থলে মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট বসানোর কাজ। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যানার, ফেস্টুন ও দিকনির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করছে কর্মীরা। অতিথি, সাধারণ অংশগ্রহণকারী ও দলীয় নেতাকর্মীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমনের পথ। ওযুর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বিশেষ স্থান; যেখানে একসাথে প্রায় ৬০০ জন ওযু করতে পারবেন। ভিআইপি ও সাধারণ অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকবে আলাদা আলাদা ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা।
সূত্র জানায়, সমাবেশ নির্বিঘ্ন ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে তিন শতাধিক সাউন্ড সিস্টেম এবং ৩৪টি এলইডি মনিটরের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এতে সমাবেশস্থলের বাইরেও লোকজন পুরো আয়োজন সরাসরি দেখতে পারবেন। বিশুদ্ধ পানির জন্য মাঠজুড়ে রাখা হচ্ছে ৬০ হাজার লিটারের পানির রিজার্ভ। ইউনিটভিত্তিক কর্মীদের জন্য আলাদাভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও থাকছে। সমাবেশস্থলে আগতদের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। মঞ্চে বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তিন’শ জনের; যেখানে জামায়াত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। যদিও সমাবেশে কোনো প্রধান অতিথি রাখা হয়নি বলে জানানো হয়েছে জামায়াতের পক্ষ থেকে। তারা বলছেন, আয়োজনের উদ্যোক্তা জামায়াত হলেও সব দল-মত নির্বিশেষে এই সমাবেশের স্টেজে থাকবেন, এ কারণেই এখানে প্রধান অতিথি রাখা হয়নি।
দলটির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, সমাবেশে ১০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেবেন। এজন্য জামায়াতের জেলা ও উপজেলা ইউনিটগুলো ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি বাস ভাড়া করেছে। এছাড়া চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে। শুধু সড়ক বা রেলপথ নয়, নদীপথেও বহু নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। জামায়াতের মহানগর নেতা আব্দুস সাত্তার সুমন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা ১০ লাখ নেতাকর্মীর টার্গেট ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। উপস্থিতির সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে।
এছাড়া সমাবেশস্থল সুশৃঙ্খল রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন ৬হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। তারা মাঠ ব্যবস্থাপনা, প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ, জরুরি সেবা ও অংশগ্রহণকারীদের সহায়তা প্রদান করবেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াত। দলটির দাবি, আইনগত কাঠামোর মধ্য থেকেই তারা সমাবেশ আয়োজন করছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাই তাদের লক্ষ্য।
বিএনপিসহ সকল ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলকে এই জাতীয় সমাবেশে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার বিভাগের দায়িত্বশীল আব্দুস সাত্তার সুমন। তিনি বলেন, সাত দফা দাবিতে জাতীয় সমাবেশ আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবেশে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল বিএনপি হতে শুরু করে সকলকে আমরা দাওয়াত করেছি। আমরা আশা করছি, সমাবেশে সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কিংবা প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।সমাবেশ উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকাল ৩টায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমাবেশ স্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন।
সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, ‘সাত দফা দাবিতে আগামীকাল ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবেশ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। সমাবেশের জন্য রাজধানীবাসির সাময়িক অসুবিধার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, সমাবেশে কোন প্রধান অতিথি থাকবে না। যারা স্টেজে থাকবেন সকলে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামাতের সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল দেলাওয়ার হোসেন সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
জামায়াতের সাত দফা দাবি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সব গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণ।