Saturday, July 19, 2025

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় এখনও যেসব প্রশ্নের উত্তর অজানা

আরও পড়ুন

ভারতের আহমেদাবাদে গত ১২ জুন লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি (বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার) আকাশে ওড়ার অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এটি ছিল গত এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।

ওই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হন। তাছাড়া, যে আবাসিক এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেখানকারও ১৯ জন নিহত হন।

এই দুর্ঘটনায় ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পরই জ্বালানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

তবে এই তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিললেও নতুন করে আরও অনেক প্রশ্নও উঠেছে।

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, বিমানটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে ১৮০ নট ইন্ডিকেটেড এয়ারস্পিড (আইএস) গতি অর্জন করে। ঠিক তার পরপরই ইঞ্জিন ১ এবং ইঞ্জিন ২–এর জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো ‘রান’ থেকে ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে যায়। এটি মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে এই অবস্থায় চলে যায়। এর ফলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে ইঞ্জিন দুটির এন১ ও এন২ মান কমতে শুরু করে।

প্রতিবেদন আরও জানানো হয়েছে, রানওয়ের সীমানা প্রাচীর অতিক্রম করার আগেই বিমানটির উচ্চতা কমতে শুরু করে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা গেছে, এক পাইলট অপর পাইলটকে ওই সময় জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কেন জ্বালানি বন্ধ করলে?’ জবাবে অপর পাইলট বলেন, তিনি জ্বালানি বন্ধ করেননি।

আরও পড়ুনঃ  ৫৩ যাত্রী, ১২ নাবিক ও ২২টি যানবাহন নিয়ে ডুবে গেল ফেরি, অতঃপর...

তবে ওই দুই পাইলটের মধ্যে মূল পাইলট এবং কে সহকারী পাইলট ছিলেন—প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, ইঞ্জিন-১ কাট-অফ হওয়া সত্ত্বেও কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করেছিল, তবে ততক্ষণে বিমানের গতি কমে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইঞ্জিন ১–এর ‘কোর ডেসিলারেশন’ বন্ধ হয়ে উল্টো ঘুরে গিয়ে কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করে, তবে ইঞ্জিন ২ ‘রিলাইট’ (পুনরায় চালু) হলেও গতি কমা ঠেকাতে পারেনি।

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে ইঞ্জিনে ‘জ্বালানি শেষ’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এলেও, কীভাবে তা হলো—সেই প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে।

রান থেকে কাটঅফ, কিন্তু কীভাবে?

প্রতিবেদনে জ্বালানির সুইচ বন্ধের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কীভাবে তা বন্ধ হয়ে গেল, তা এখনও অস্পষ্ট।

এটি ইচ্ছাকৃত ছিল, না দুর্ঘটনাবশত, নাকি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়েছে—সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি তদন্ত সংস্থা।

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানে এই সুইচটি থাকে দুই পাইলটেরর সিটের মাঝখানে, থ্রটল লিভারের ঠিক পেছনে (থ্রটল লিভার মানে হলো ইঞ্জিনের গতি ও শক্তি বাড়ানো বা কমানোর হাতল)।

আরও পড়ুনঃ  ‘গাজায় হিরোশিমার চেয়ে ৬ গুণ শক্তিশালী বোমা ফেলেছে ইসরায়েল’

সুইচের পাশে ধাতব সুরক্ষা-কাঠামো থাকে, যাতে তা ভুলবশত চাপা না পড়ে। এই সুইচগুলো চালু বা বন্ধ করতে হলে দুটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়—সুইচটিকে প্রথমে উপরের দিকে টেনে আনতে হয়, তারপর নিচের দিকে চাপতে হয়।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বহু বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে যুক্ত জিওফ্রি ডেল বলেন, ‘এটি ভুল করে করা প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি সুইচ চালু বা বন্ধ করতে কমপক্ষে দুটি শারীরিক পদক্ষেপ লাগে। যদি একসঙ্গে দুটি সুইচ বন্ধ করা হয়, সেটি সাধারণত ল্যান্ডিংয়ের পর করা হয়, যখন বিমান পার্ক করা হয়।’

তার ভাষ্য, টেক-অফের সঙ্গে সঙ্গে কেউ ইঞ্জিনে জ্বালানি কেটে দেবেন, এমন উদ্ভট বিষয় আসলে কল্পনাও করা যায় না। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে কোথাও এমন ঘটনা দেখা যায়নি।’

তদন্ত প্রতিবেদন একটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছে। ২০১৮ সালে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, বোয়িং ৭৮৭ বিমানের জ্বালানি সুইচে থাকা লকিং ফিচার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এফএএ এটিকে ‘বিপজ্জনক ত্রুটি’ হিসেবে চিহ্নিত না করায় এয়ার ইন্ডিয়া সেই সময় কোনো বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি।

আরও পড়ুনঃ  ১২ দেশের শুল্কের চিঠিতে সই করেছেন ট্রাম্প, বাংলাদেশ আছে কি?

ডেল বলেন, ব্ল্যাক বক্সে থাকা বিস্তারিত ডেটা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যেতে পারে, কীভাবে সুইচগুলো বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু ভারতের তদন্ত সংস্থা এখনও পাইলটদের কথোপকথনের সম্পূর্ণ ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করেনি। যেটি তদন্তের জন্য জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

দায় কী তবে পাইলটদের?

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এখনই পাইলটদের ওপর দোষ চাপানো উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পাইলট এহসান খালিদ।

তিনি বলেন, ‘এএআইবির প্রতিবেদন শুধু এটুকুই নিশ্চিত করে যে ইঞ্জিনে জ্বালানি বন্ধ হওয়ার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘পাইলটরা বুঝতে পেরেছিলেন ইঞ্জিনে শক্তি নেই এবং তারা এটাও নিশ্চিত ছিলেন যে, তারা এই পরিস্থিতি তৈরি করেননি।’

তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পেতে আরও কয়েক মাস লাগবে বলে জানা গেছে।

ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না।’

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাবে এবং প্রাপ্ত প্রতিবেদনের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ