এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে বিপত্তি যেন থামছেই না। এবার হংকং থেকে দিল্লিগামী ফ্লাইট এআই-৩১৫-এর অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিটে (এপিইউ) আগুন ধরে যায়। ফ্লাইটটি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কিছুক্ষণ পরই এ অগ্নিকাণ্ড হয়। এয়ারলাইনটি মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
এয়ারলাইনের তথ্য মতে, যাত্রীরা যখন বিমান থেকে নামছিল, তখনই আগুন শনাক্ত হয়। আগুন শনাক্ত হওয়ার পর সহায়ক বিদ্যুৎ ইউনিট বা এপিইউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদে বিমান ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, এপিইউ হলো একটি ছোট ইঞ্জিন। বিমান যখন রানওয়ে ছুঁয়ে থাকে, তখন তাকে শক্তি জোগায় এটি। সেই সময় বিমানের এসি, লাইট জ্বালাতে, প্রধান ইঞ্জিন চালু করতে শক্তির জোগান দেয় এপিইউ।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিমানটিতে ‘কিছু ক্ষতি’ হয়েছে। এটি একটি দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট এয়ারবাস এ৩২১ বিমান। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিমানটি স্থগিত রাখা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালককে (ডিজিসিএ) এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
দিল্লির এই ঘটনাটি দেশীয় বিমান সংস্থাটির জন্য উদ্বেগ আরো বাড়াল। কারণ গত ছয় মাসে পাঁচটি নিরাপত্তা লঙ্ঘনের জন্য তারা ৯টি নোটিশ পেয়েছে বলে সোমবার পার্লামেন্টে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মুরলিধর মোহল।
এদিকে গত ৪৮ ঘণ্টায় এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য এটি ছিল তৃতীয়বার অল্পের জন্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা। একটি কোচি-মুম্বাই ফ্লাইট সোমবার অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। এতে বিমান ও রানওয়ে—উভয়েরই ক্ষতি হয়।
একই দিনে দিল্লি-কলকাতা একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের সময় সর্বশেষ মুহূর্তে থেমে যায়। তখন বিমানটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার। পরে এয়ারলাইনটি জানায়, উড্ডয়নের সময় একটি ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’ শনাক্ত হয়েছিল।
উল্লেখযোগ্যভাবে একই রুটে গত মাসেও একটি বিমানে ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’ দেখা গিয়েছিল। তখন সেটি ছিল একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। ফ্লাইটটিকে হংকং বিমানবন্দরে ফিরে যেতে হয়। এই ঘটনাটি ঘটেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার তিন দিন পর।
তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ১২ জুনের দুর্ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা এখনো মেলেনি। সেদিন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের পথে উড্ডয়নের ৩২ সেকেন্ড পরই এআই-১৭১ ফ্লাইট হিসেবে যাত্রা করা বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হয়।
একটি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে ধরা পড়া এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৭৪ জন ও মাটিতে থাকা আরো ১৯ জন প্রাণ হারায়। বিমানটি মাঝ আকাশে গতি হারিয়ে একটি কলেজ হোস্টেলে আছড়ে পড়ে। বিমানে থাকা একজন মাত্র যাত্রী বেঁচে যান।
এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জ্বালানির সরবরাহ নিয়ন্ত্রণকারী উভয় সুইচ বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনে সুইচের অবস্থান এবং ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল ও ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডারের মধ্যে রেকর্ড হওয়া কথোপকথনের একটি অংশ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ওই অংশে দেখা যায়, একজন পাইলট (কে তা স্পষ্ট নয়) আরেকজনকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করেছেন। জবাবে দ্বিতীয় পাইলট বলেন, তিনি তা করেননি।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল দাবি করেছে, রেকর্ডিং ইঙ্গিত দেয়, পাইলট ক্যাপ্টেন সাবরওয়াল ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করেছিলেন। এই দাবির কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ না থাকায় তা ভারত সরকার ও বিমান চলাচল মহলে তীব্রভাবে নিন্দিত হয়েছে।
গত সপ্তাহে এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘অযাচাইকৃত’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ প্রতিবেদনের জন্য সমালোচনা করে। এই ঘটনার তদন্তে সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডও বিদেশি গণমাধ্যমের এমন আচরণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
দুর্ঘটনাকবলিত বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানে জ্বালানির সরবরাহ সুইচগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে তা বিশেষভাবে পাইলট না সরালে নড়ে না। এগুলো স্প্রিং-লোডেড এবং তুলে স্লট করে সেট করতে হয়। এটি দুর্ঘটনাবশত সরানো রোধ করতে করা হয়েছে।
ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো প্রাথমিক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতে নিবন্ধিত বোয়িং বিমানে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণকারী সুইচগুলো পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এই পরীক্ষা ভারতের সব বোয়িং বিমানের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা পরীক্ষা শেষ করেছে এবং কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।- এনডিটিভি