Wednesday, July 23, 2025

সরকারি টাকা আত্মসাৎ, ধরা পড়ে ফেরত দিলেন কর্মচারী!

আরও পড়ুন

চেক জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর শিল্পী খাতুন এবং জীপগাড়ির চালক মো. মজিবর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে।

কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৬ জুলাই সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন।

এরইমধ্যে অপরাধ স্বীকার করে আত্মসাৎ করা ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন শিল্পী খাতুন। তবে বাকি টাকা এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি।

ইউএনওর জারি করা অভিযোগনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, শিল্পী খাতুন ও মজিবর রহমান মোল্লা একে অপরের যোগসাজশে চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ বা প্রতারণা কার্যক্রম করে আসছেন। জুলাই মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যাংক হিসাবের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে নোট, ফিল রেজিস্টার ও চেক স্বাক্ষর না করলেও শিল্পী খাতুন ও মজিবর রহমান মোল্লা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন। তারা ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে চলতি মাসের ৭ জুলাই পর্যন্ত ৫ টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে মোট ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  ‘আমি মরে গেলে দুঃখ নাই, আগে আমার হেলপারকে বাঁচান’

এ ব্যাপারে কেন তারা, উপজেলা পরিষদ কর্মচারী (চাকুরি) বিধিমালা, ২০১০ সপ্তম অধ্যায়ের ধারা ৩৩ এর চ) অনুসারে চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ বা প্রতারণার দায়ে দোষী হবেন না এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে ধারা ৩৪ (আ) অনুযায়ী গুরুদণ্ড প্রদান করা হবে না তার বিষয়ে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নোটিশে বলা হয়েছে। এছাড়া আত্মসাৎকৃত সমুদয় অর্থ আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতনভাতা শিরোনামে চলতি হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘বিকট শব্দ শুনেই গিয়ে দেখি পরিবারটির ৩ জনের শরীর আগুনে ঝলসানো’

এ বিষয়ে জিপগাড়ি চালক মজিবর রহমান মোল্লা বলেন, আমার বেতনের অ্যাকাউন্টে ৫ দফায় মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা এসেছে। আমার অ্যাকাউন্টে টাকা আসার পর শিল্পী খাতুন আমাকে টাকাগুলো উত্তোলন করে তাকে দিতে বলে। আমিও তাকে টাকাগুলো দিয়ে দেই। গত ১৩ জুলাই ইউএনও স্যার আমাকে ডেকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আমি স্যারকে বলি আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল, আমি টাকা তুলে শিল্পীকে দিয়েছি। তখন ইউএনও স্যার শিল্পীকে ডাকলে শিল্পী স্যারের পা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে বলে যে তার ভুল হয়েছে। স্যারের পা ধরে সে মাফও চায়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সদর উপজেলা পরিষদে শিল্পীর অফিস কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে শিল্পীর বাসায় গেলে তার স্বামী জানান, তিনি খুব অসুস্থ, কথা বলতে পারবেন না। একপর্যায়ে শিল্পী সাংবাদিকদের তার কক্ষে ডেকে কান্নাকাটি করতে করতে বলেন, ‘আমি খুবই অসুস্থ, কথা বলতে পারছি না। জিপগাড়ি চালক মজিবরের বুদ্ধিতে আমি ভুল করেছি। এখন ভুল স্বীকার করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। এরই মধ্যে আমি ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ইউএনও স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের বেতনভাতা শিরোনামে চলতি হিসাব নম্বরে জমা দিয়ে দিয়েছি।

আরও পড়ুনঃ  উড্ডয়নের সময় পড়ে গেল চাকা, ৭১ যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে বিমান

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, এই অর্থবছরের শেষের দিকে আমি অফিসের কিছু কাগজপত্রে বিচ্যুতি লক্ষ্য করি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে যে বা যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত শেষে আপনাদেরও (সাংবাদিকদের) জানানো হবে।

এদিকে, এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ