উড্ডয়নের পর বেশি সময় পাননি পাইলট– এমন বিশ্লেষণ তুলে ধরে সাবেক সামরিক বৈমানিকরা বলছেন, উচ্চতা কম থাকায় বিধ্বস্তের আগে পাইলট জনবহুল এলাকা থেকে বিমানটি দূরে নিয়ে যেতে পারেননি। আর এতেই বেড়েছে হতাহতের সংখ্যা। পাশাপাশি বিমানবাহিনীতে অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ যুক্ত করা ও প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন তারা। রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি না থাকলে এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা কম বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে প্রথমবারের মতো ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটলো। সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের এক ভবনে আছড়ে পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-সেভেন বিজিআই মডেলের বিমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উড্ডয়নের পরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় জনবহুল এলাকা থেকে দূরে যাওয়ার সময় পাননি পাইলট, যা বাড়িয়েছে হতাহতের সংখ্যা। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিমানবাহিনীর বহরে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ বিমান যুক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সেইসঙ্গে অত্যাধুনিক বিমান কেনার পাশাপাশি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ যেমন জরুরি তেমনি পাইলটের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত উড্ডয়নের সুযোগ থাকা জরুরি বলে মত তাদের।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘দুর্ঘটনাটা মাত্র ২ মিনিটের মধ্যেই হয়ে গেছে। বিমান চালনা অব্যাহত রাখতে পারলে হয়ত ঢাকা থেকে বেরিয়ে সাভার এলাকায় গিয়ে বিধ্বস্ত হলে জনবহুল এলাকায় পড়ত না। এতে পাইলটও বেঁচে যেতেন, এত ক্ষয়ক্ষতিও হত না।’
তিনি আরও বলেন,
আমাদের যুদ্ধবিমান যেটা আরও ২০ বছর আগে আধুনিক হওয়া উচিত ছিল, সেটা হয়নি। এছাড়া দুর্ঘটনার দুইটা বিষয় আছে। একটা হচ্ছে প্রশিক্ষণ দুর্বল হলে, আর আরেকটা হচ্ছে যথেষ্ট ফ্লাইং না হলে। ধরুন, অনেক পাইলট আছেন, কিন্তু এয়ারক্র্যাফট নেই, তখন আপনি কী করবেন?
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘যদি রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো করা যায়, তবে ১৫-১৬ বছরে একটা এয়ারক্র্যাফটের ভ্যালু কমে যাওয়ার কথা না।’
অবসরপ্রাপ্ত সেনা পাইলট কর্নেল মো. সোহেল রানা বলেন, ‘অর্থনৈতিক একটা বড় ইস্যু আছে। যুদ্ধাস্ত্রের ব্যাপারে বা প্রতিরক্ষার ব্যাপারে কখনো কার্পণ্য করতে নেই, সেটা বিমানবাহিনী হোক বা নৌবাহিনী হোক কিংবা সেনাবাহিনী হোক।’
বাংলাদেশে এই মডেলের বিমানের তৃতীয় দুর্ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুর ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় এফ-৭ বিজি ও ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-সেভেন এমবি।
তথ্য বলছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৩৬টি এফ-৭ যুদ্ধ বিমান রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টিই এফ-৭ বিজিআই। যুদ্ধ বিমানগুলো ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে হাতে পায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। আর ওই বছরই এই মডেলের উড়োজাহাজ উৎপাদন বন্ধ করে দেয় চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন।