Thursday, August 21, 2025

‘আমার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই, আমি যা বলি তাই হবে’

আরও পড়ুন

আমি সুনামগঞ্জে বিয়ে করেছি, সুনামগঞ্জের জামাই হিসেবে আপনাদের কী লাগি সেটা আর বললাম না। এক পা পাড়া দিয়ে ধরে, আরেক পা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। আমার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই, আমি যা বলি তাই হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় এভাবেই প্রকাশ্যে শিক্ষকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলেমান মিয়ার বিরুদ্ধে। 

গত ১১ আগস্ট তাহিরপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এই ঘটনা ঘটে। 

একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, হাওর ভাতা নিয়ে শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্ট করায় এমন হুমকি দিয়েছেন, শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলেমান মিয়া। 

ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক এক শিক্ষক। গত ২০ আগস্ট বুধবার ইমেইলের মাধ্যমে এই অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, শিক্ষা কর্মকর্তা প্রকাশ্যে সভায় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অশোভন, অশালীন ও হুমকিসরূপ ভাষা ব্যবহার করায় প্রধান শিক্ষকগণ ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হয়েছেন। 

আরও পড়ুনঃ  যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন মিটফোর্ডে সোহাগকে পাথর দিয়ে আঘাত করা সেই যুবক

অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুব জামানকে নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তা মোহন লাল দাস। 

তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তাহিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলেমান মিয়া বললেন, আমি শিক্ষকদের খুব ভালোবাসি। অভিযোগগুলো ডাহা মিথ্যা। মধ্যস্থ ভোগী একটি চক্র যারা স্কুল বিমুখ, যারা অফিস কেন্দ্রিক আড্ডা দিত, যারা নিজেদের মত চলতে চায়, তারাই বেনামে এমন অভিযোগ করেছেন। কিন্তু আমি তাদের মত চলতে দেব না। শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সদর উপজেলার একটি ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে বলতে গিয়ে বলেছি, আমি সুনামগঞ্জের জামাই, আমি কারো মামু-খালু নই, আমার শিক্ষকদের সঙ্গে কেউ খারাপ আচরণ করলে পা ছিঁড়ে ফেলব। শিক্ষকদের পা ছিঁড়ার কথা বলিনি। 

শিক্ষকদের হাওর ভাতা প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, হাওর ভাতা প্রদানের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি। সরকারি অর্থ ছাড় হয় কোড নম্বরে, সেই কোড নম্বরই তৈরি হয়নি। শিক্ষকরা না বুঝে ফেসবুকে শিক্ষা অফিসারকে উনি উনি বলে নেতিবাচক নানা লেখালেখি ও মন্তব্য করছিলেন। যে কারণে ৮ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ভবিষ্যতে এমন হবে মর্মে সবাই লিখিত দিয়েছেন, সবাইকে ক্ষমা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ এমন আচরণ করলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ  অবশেষে গোপালগঞ্জে সেনা সদস্যের পদত্যাগ নিয়ে জানা গেল যা!

একাধিক শিক্ষক জানান, গত জুলাই মাসে তাহিরপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাওর ভাতা পান। কিন্তু একই উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভাতা পাননি। এতে তাঁরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন। শিক্ষকরা শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা কর্মকর্তার গাফিলতিতে দায়ী করে ফেসবুক পোস্ট করেন। সহকর্মীর ফেসবুক পোস্টে নানা কমেন্ট করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের কমেন্টেরও জবাব দেন শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলেমান মিয়া। এরপর গত ১১ আগস্ট প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলেমান মিয়া ফেসবুকে পোস্ট ও কমেন্টকারী শিক্ষকদের হুমকি দেন। সভায় উপস্থিত কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ফেসবুকে লেখালেখির বিষয়টি ভুলে যাওয়া ও বাদ দেওয়ার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন। 

আরও পড়ুনঃ  খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিদ্রুপকারী রাজু শেখ পেলেন ছাত্রদলে পদ

এরপর গত ১৩ আগস্ট ফেসবুকে নেতিবাচক লেখালেখির বিষয়ে তাহিরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হোসেন আহমদ, পুরান বারুংকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চক্রবর্তী, মাটিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেলাল আবেদীন, দ্বীপ পুরকায়স্থ, পাতারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাদি-উ-জ্জামান ও বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকসহ ৮ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর ২০ আগস্ট বুধবার তারা নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তা মোহন লাল দাস বলেন, তাহিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এমন কথাবার্তা কারোরই বলা উচিত নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি নিয়েও শিক্ষকদের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি বিধিমালা মেনে চলতে হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বিষয়ে আগামী সোমবার সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তা তাহিরপুরে গিয়ে তদন্ত করবেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ