Saturday, August 23, 2025

বিয়ের উৎসব মুহূর্তেই পরিণত হলো পরিবারের ২৪ জনের জানাজায়

আরও পড়ুন

নূর মুহাম্মদ একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী পাকিস্তানি নাগরিক। বিয়ের উদ্দেশে গত ১৫ আগস্ট তিনি পাকিস্তানে আসেন। এ সময় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বুনের জেলায় তার বাড়িতে পুরোদমে চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি। কিন্তু তিনি বাড়ি এসে সাক্ষী হন এক করুণ ও হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির। পরিবারের ২৪ সদস্যের জানাজায় অংশ নিতে হয় তাকে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) জিও নিউজের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার সময় ওই বাড়িতে অবস্থান করা মুহাম্মদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের ২৮ সদস্যের মধ্যে ২৪ জনই প্রাণ হারান। এর কিছুক্ষণ আগে অর্থাৎ বিয়ের দুই দিন আগে, সর্বশেষ তার মায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি।

নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি বোঝাতে পারব না যে তিনি কতটা খুশি ছিলেন।’ কাদির নগর গ্রামে খালের তীরে অবস্থিত তার পরিবারের বিশাল ৩৬ কক্ষের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টা থেকে যেভাবে বেঁচে গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট, জানালেন নিজেই

পাহাড়ি বুনের জেলার এই গ্রামটি সাম্প্রতিক প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলাটি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে তিন ঘণ্টার পথ। ১৫ আগস্ট থেকে উত্তর-পশ্চিমে বন্যায় প্রায় ৪০০ জনের মধ্যে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এই অঞ্চলে।

২৫ বছর বয়সী মুহাম্মদ কাঁদতে কাঁদতে তার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে শোক প্রকাশ করতে বসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি বাড়ি ফিরে আসার সময় ধ্বংসস্তূপ এবং ভারী পাথর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। এগুলো পাহাড় থেকে কাদা এবং প্রচণ্ড বন্যার পানির সঙ্গে ঘরবাড়ি, বাজার এবং ভবনগুলোতে ভেঙে পড়েছিল।’

নিহতদের মধ্যে তার মা, এক ভাই এবং এক বোনও ছিলেন। তিন বলতে থাকেন, ‘এক বিরাট বন্যা এলো, সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল; বাড়ি, মা, বোন, ভাই, আমার চাচা, আমার দাদা এবং বাড়িতে থাকা ছোট বাচ্চাদের। আমরা আর কী বলতে পারি? এটা আল্লাহর ইচ্ছা।’ তবে তাকে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নিতে যাওয়ার কারণে বেঁচে যান তার বাবা ও আরেক ভাই।

আরও পড়ুনঃ  শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ৬০, বহু নিখোঁজ

বাকি নিহতরা হলেন- তার চাচাদের পরিবারের সদস্যরা, যারা তার দাদার তৈরি বাড়িটিতে উত্তরাধিকার সূত্রে ছিলেন এবং তার বিয়েতে যোগদানকারী আত্মীয়স্বজনরা।

বিধ্বংসী আকস্মিক বন্যা
মেঘ ভাঙনের কারণে এই বছরের বর্ষা এবং উত্তর-পশ্চিমের পাহাড়ি এলাকায় শুরু হওয়া আকস্মিক বন্যা ২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে, যা ব্যাপকভাবে মৃত্যু এবং ধ্বংস ডেকে আনে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্বায়ন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ভারী বৃষ্টিপাত ও বিরল মেঘ বিস্ফোরণের মূল কারণ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে এর তীব্রতা আরও বাড়বে। কর্মকর্তারা বলছেন, অজানা সংখ্যক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে, উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো যে দেশ

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মতে, জুনের শেষের দিকে শুরু হওয়া বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের ফলে সারা দেশে মোট মৃতের সংখ্যা ৭৭৬ জনে পৌঁছেছে। এ সময় উত্তর-পশ্চিমে আটকে পড়া ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী।

এই বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ঘটনা হিসেবে মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনায় মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে বুনারে ১৫০ মিমি (৫.৯১ ইঞ্চি) এর বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ