প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই করেছে জামায়াতে ইসলামী। এরমধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে চান দলটির অন্তত দুই ডজন তরুণ প্রার্থী। ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে এসব প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র মতে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এসব আসনে কিছু পরিবর্তন হতে পারে। তবে আপাতত সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় আছেন বেশির ভাগ ছাত্রশিবির থেকে উঠে আসা এসব নবীন প্রার্থী।
দলীয় সূত্রে বলা হয়, তরুণ প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা ও তরুণ প্রজন্মের আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান রেখে এই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রায় ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত। এই প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায় তরুণ প্রার্থীদের কেউ কেউ আবার সংশ্লিষ্ট আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ সাঈদী। মরহুম আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর তৃতীয় পুত্র মাসুদ সাঈদী পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। পিরোজপুর-১ আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী।
ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ফেনী-৩ (সোনাগাজী- দাগনভূঁইয়া) আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। এখানে বিএনপি’র একজন হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হবে জামায়াতের এই নবীন প্রার্থীকে। ঢাকা-১১ (রাজধানীর বাড্ডা- ভাটারা- রামপুরা হাতিরঝিল) আসনে লড়বেন জামায়াতের আরেক তরুণ প্রার্থী এডভোকেট আতিকুর রহমান। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বর্তমানে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। নবীন প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন তিনিও।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আসন্ন নির্বাচনে একজন আলোচিত প্রার্থী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মাসুদ বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য। তিনি পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাগেরহাট জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শেখ মঞ্জুরুল হক রাহাত আসন্ন নির্বাচনে বাগেরহাট-২ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। দিনাজপুর শহর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান। আগামী নির্বাচনে দিনাজপুর-১ বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার- গোলাপগঞ্জ) আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সেলিম উদ্দিন এই আসনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যারিস্টার মাহবুব সালেহী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। এ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। ফলে এখানে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে জানা যায়। কুমিল্লা-১০ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাতও আসন্ন নির্বাচনে একজন সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন।
শেরপুর-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম। তিনিও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. রেজাউল করিম বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি। তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। এখানে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব আরেক সাবেক ছাত্রদল নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের মাঠে লড়তে হতে পারে তাকে। শেরপুর-২ আসনে জামায়াতের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। ছাত্রশিবিরের রাজনীতি থেকে উঠে আসা গোলাম কিবরিয়া ময়ময়নসিংহ মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে একজন নবীন প্রার্থী হিসেবে মাঠে লড়বেন বলে জানা যায়। ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম আরমান ঢাকা-১৪ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। বহুল আলোচিত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পুত্র ব্যারিস্টার আরমান পতিত সরকারের আমলে তার পিতার বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় লড়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদী সরকার তাকে আয়নাঘরে গুম করে রাখে দীর্ঘদিন। হাসিনা সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান আরমান। ড. মোবারক হোসেন কুমিল্লা-৫ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। ড. মোবারক হোসেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন। পিরোজপুর-২ আসনে লড়বেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় পুত্র শামীম সাঈদী। পিতার পরিচয়ে শামীম সাঈদীও আসন্ন নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। এডভোকেট সাইফুর রহমান চট্টগ্রাম-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী।
আতাউর রহমান সরকার ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৪ কসবা আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার মিডিয়া শাখার দায়িত্ব পালন করছেন। সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি এডভোকেট শিশির মনির। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের তরুণ আইনজীবী হিসেবে শিশির মনির ইতিমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা আনোয়ারুল ইসলাম রাজু লালমনিরহাট-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। রংপুর-১ আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে নির্বাচনী তৎপরায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। মাওলানা জহুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন। এডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাশেদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি। রাসেল চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী।
অধ্যাপক মাওলানা ইকবাল হোসাইন তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর। আগামী নির্বাচনে ইকবাল হোসাইন পঞ্চগড়-১ (সদর-তেঁতুলিয়া)আসনে জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাদারীপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মৃধা আগামী নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন আইয়ুবী আগামী নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।