Wednesday, August 27, 2025

বিএনপির শোকজের যে জবাব দিয়েছেন ফজলুর রহমান, পড়ুন পুরোটা

আরও পড়ুন

বিএনপির পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই জবাব দেন তিনি।

চিঠিতে রিজভীকে উদ্দেশ্য করে ফজলুর রহমান লিখেছেন, আপনি জানতে চেয়েছেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কেন আমি ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ এবং বিব্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এই অভিযোগটি অস্বীকার করে আমি বলতে চাই আমি কোনদিন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেই নাই যা আমার স্বভাব ও চরিত্রের বিপরীতে। আমিই প্রথম ২০২৪ ইং সনের ১৬ জুলাই রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ আবু সাইদকে পুলিশ সরাসরি বুকে গুলি করে হত্যা করার পর বলেছিলাম সে এই একুশ শতাব্দির প্রথম “বীরশ্রেষ্ট”। আমার বক্তব্যে জুলাই-আগষ্ট শহিদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি।

তিনি লিখেছেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে আমি নাকি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলেছি যা আমার দৃঢ় ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অবিচার। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই আমি ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহ রাসুলে বিশ্বাসী ব্যক্তি। তবে রাজনৈতিকভাবে ধর্ম ব্যবসায়ীদের (যেমন জামাতে ইসলামী) বিরুদ্ধে চিরদিন কথা বলেছি, আগামীতেও বলবো।

শোকজের জবাবে ফজলুর রহমান লিখেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রথম শুরু হয়েছিল তা ছিল নির্দলীয় চরিত্রের এবং রাজনৈতিক দাবি বিবর্জিত। আমিই প্রথম তাদেরকে ইউটিউবের মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম, “বাবারা তোমরা শুধু চাকরি চাও, গণতন্ত্র চাও না? তোমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কর”। জুলাই আন্দোলনের পরতে পরতে সমস্ত কিছুর সঙ্গে জীবনের শংকা নিয়েও যুক্ত ছিলাম যা আমার দল এবং এ দেশের সমস্ত মানুষ জানে।

আরও পড়ুনঃ  ‘৫ নেতার শোকজের জবাব পেয়েছে এনসিপি, সিদ্ধান্ত নেবেন আহ্বায়ক-সদস্য সচিব’

তিনি আরও লিখেছেন, ২০২৩ সনের ২৮ অক্টোবরে বিএনপির লক্ষ লক্ষ জনতার মহা-সমাবেশকে স্বৈরাচারী সরকার ১ ঘণ্টার আক্রমণে ভেঙে দিয়েছিল। পঁচিশ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী যখন জেলে ছিল, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী যখন মিথ্যা মামলার আবর্তে পড়ে জীবন বাচাঁনোর জন্য প্রানপণ চেষ্টা করছিল, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি তখন প্রতিদিন অনলাইন এবং টেলিভিশন টকশোর মাধ্যমে নেতা কর্মীদের উজ্জিবিত করেছি এবং জাতির সামনে আশার আলো জাগিয়ে রেখেছি।

চিঠিতে ফজলুর রহমান বলেছেন, ৫ আগস্ট আন্দোলনের বিজয়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিস্ট শক্তি পালিয়ে গেল এবং জনগণ বিজয়ী হলো আমি সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এর কিছু দিন পরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম “ইসলামী ছাত্র শিবিরের” সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলো “জামাত শিবিরই ছিল জুলাই আন্দোলনের মূল ভ্যানগার্ড”। আমি সেদিনই প্রমাদ গুনলাম এবং আন্দোলনের সমস্ত বিজয়কে তারা নিজেদের মধ্যে কুক্ষিগত করলো।

তিনি আরও লিখেছেন, আমি জামাত শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এই অনৈতিক দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শতবার বলেছি। বিগত ১৫ বছরের আন্দোলনে জমিটি তৈরি করেছিল বিএনপি, বীজ এবং চারা রোপন করেছিল বিএনপি, তৈল মবিল পানি দিয়ে ধান ফলিয়ে ছিল বিএনপি কিন্তু ধান কাটার লগ্নে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেই তৈরি ধানটি কেটে দিয়েছিল। তারা ছিল আমার ভাষায় ‘দাওয়াল’, কাজেই আন্দোলনের সমস্ত ফসল পাওয়ার দাবিটি অনুচিত।

বিএনপির এই নেতা জবাবে আরও বলেছেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবাক বিস্ময়ে সবাই দেখলো ৭১ এর পরাজিত শক্তি জামাত শিবির স্বদর্পে মাঠে হাজির হয়েছে এবং দাবি করছে সমস্ত আন্দোলনের ভ্যানগার্ড তারাই এবং শুধু একটা নির্বাচনের জন্যই তারা আন্দোলন করেনি বরং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের মতো দুঃসাহস তারা প্রদর্শন করতে লাগলো। জামাত শিবিরের পত্রিকার আহব্বান জানানো হলে “৭১ এ যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিল তারা আল্লাহর কাছে মাফ চাও” (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। সেদিন থেকে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে তাদেরকে সাবধান করার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ  একটা দল টুপি মাথায় দিয়ে ছাত্রদের ভুল বোঝাচ্ছে : অলি আহম্মেদ

তিনি লিখেছেন, এরপর থেকে জামাত শিবির এবং এনসিপি একসঙ্গে বলতে শুরু করলো ১৯৪৭ হলো প্রথম স্বাধীনতা এবং ২০২৪ হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা, আর ১৯৭১ হলো ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনে হলো এসব অশ্রাব্য এবং মিথ্যা তথ্য শুনার আগে আমার মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। তাই জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথাগুলো বলতে শুরু করলাম এবং জামাত শিবিরকে ‘কালো শক্তি’ চিহ্নিত করে এনসিপিকে তাদের সহযোগী বলতে শুরু করলাম। তারাই এখন দেশের সমস্ত প্রশাসন, অর্থ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে।

ফজলুর রহমান লিখেছেন, আমি সবশেষে বলতে চাই মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে জুলাই আন্দোলনের দুটি রুপ ছিল। প্রথমতো ‘বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে’ ‘গণ-আন্দোলন’ যার লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। যার প্রধান স্লোগান ছিল ‘এক দফা ‘এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি’। কিন্তু আমি যাদেরকে অন্ধকারের ‘কালো শক্তি’ বলেছি তারা হলো জামাত শিবির যারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণ আন্দোলনের ফসলকে কুক্ষিগত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র এবং শক্তি সৃষ্টি করছে। জাতীয় নির্বাচন তাদের নিকট গৌণ ব্যাপার।

আরও পড়ুনঃ  ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, আমার প্রিয় দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক “মেজর জিয়া” পরবর্তী সময়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচাইতে বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তার মহান স্মৃতিকে শ্রদ্ধা এবং স্মরণ করেই আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর কথা বলা এবং প্রতিবাদ করাকে আমার পবিত্র দ্বায়িত্ব বলে মনে করি। গত ৬মাস ধরে এ ব্যাপারে আমি শত শত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি, এর মধ্যে দু একটা বক্তব্যে আমার কিছু ভুল ত্রুটিও থাকতে পারে কারণ আমি তো মানুষ। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার অন্যায়ভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করার পরে আমি স্বৈরাচারী সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আমি আমার নেত্রীর মুক্তির জন্য সমগ্র বাংলাদেশে শত শত সভা ও জনসভায় বক্তব্য রেখেছি। এমনকি ইদানিংকালে একটি দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রিয় নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এমন জঘন্যতম কুৎসিত স্লোগান দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে অপমান করা হচ্ছিল, তখন আমিই প্রথম কঠিনভাবে এর বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলাম।

ফজলুর রহমান লিখেছেন, আমার সার্বিক বক্তব্য উপস্থাপনায়, যদি প্রমাণিত হয় আমি কোন ভুল বক্তব্য দিয়েছি তবে আমি দুঃখ প্রকাশ করবো। আমার প্রিয় দল বিএনপির কোন ক্ষতি হয় এমন কোন কথা ও কাজ আমি করিনি এবং করবোও না। জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বের বিচার বিবেচনার প্রতি আমার সর্বোচ্চ আস্থা আছে, আশা করি আমি সুবিচার পাবো এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদাই অনুগত থাকব।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ