শিক্ষক বা শিক্ষিকা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তারা মানুষের ভিতর শিক্ষার আলো জ্বেলে দেন। মানুষকে সঠিক ও ভুল পথ চিনতে সহায়তা করেন। গড়ে তোলেন নৈতিক চরিত্র। কিন্তু ইদানীং কিছু শিক্ষক বা শিক্ষিকার কারণে তাদের এই মর্যাদা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষিকা সমস্ত নীতি বিসর্জন দিয়ে ছাত্র বা ছাত্রীর সঙ্গে গড়ে তুলেছেন যৌন সম্পর্ক। এমন অভিযোগে অনেক শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে শাস্তি পেতে হয়েছে। অনেক মামলা এখনও রয়েছে অমীমাংসিত অবস্থায়। এমনই এক শিক্ষিকা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ডাউনার্স গ্রোভ সাউথ হাইস্কুলের ৩০ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা ফর্মেলা। তার বিরুদ্ধে ১৫ বছর বয়সী এক ছাত্রের সঙ্গে ৫০ বারেরও বেশি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিস্ময়করভাবে, অভিযুক্ত এই শিক্ষিকা বৃহস্পতিবার আদালতে তার কথিত যৌনাচারের শিকার কিশোরের কাছাকাছি বসবাস করার অনুমতি চেয়েছেন, যা বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দেন।
২০২৪ সালের মার্চে ক্রিস্টিনা ফর্মেলার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট এবং দুইটি গুরুতর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। এরপর তাকে আরও ৫২টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, যা একাধিকবার ছাত্রটিকে যৌন শোষণের অভিযোগে প্রমাণিত হয়।
নিউ ইয়র্ক পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফর্মেলা অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে তার স্বামী মাইকেল ফর্মেলা, যিনি তার কলেজ জীবন থেকে প্রেমিক, এখনো তার পাশে রয়েছেন। মাইকেল দাবি করেন, তার স্ত্রীর চেহারা ও আকর্ষণ তাকে ফাঁসানোর কারণ হতে পারে। ফর্মেলা বর্তমানে তার বাবা-মায়ের ৫লাখ ৬০ হাজার ডলার মূল্যের একটি গলফ কোর্সের পাশে অবস্থিত বাড়িতে বসবাস করছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তার পায়ের গোঁড়ালিতে ইলেকট্রনিক মনিটর পরানো হয়েছে। বর্তমান আইনি নিয়মে তাকে ভিকটিম থেকে কমপক্ষে ৫,০০০ ফুট দূরে থাকতে বলা হয়েছে। তবে আদালতে তিনি অনুরোধ করেন, যেন এই নিরাপদ দূরত্ব কমিয়ে ২৫০০ ফুট করা হয়। কারণ ওই কিশোর ছেলেটি ‘প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে তার এলাকার আশেপাশে সময় কাটায় এবং কাজ করে’। বিচারক তার এই আবেদন তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।
প্রসিকিউটর জ্যাকলিন ম্যাকঅ্যানড্রু আদালতে বলেছেন, ক্রিস্টিনা ফর্মেলা ওই কিশোরটিকে ১৪ বছর বয়স থেকে ধীরে ধীরে প্রলুব্ধ করে আসছিলেন। তিনি তাকে মিথ্যা নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন এবং বারংবার যৌন নিপীড়ন চালান। ফর্মেলা দোষী সাব্যস্ত হলে, তার সর্বোচ্চ ৬০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এক প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে জানিয়েছেন, শুনানির সময় ফর্মেলা ও তার স্বামী একে অপরের হাতে হাত রেখে হাসিমুখে বসে ছিলেন। তাদের আত্মবিশ্বাস দেখে সবাই হতবাক হন। এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের সীমা ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। এমনকি অভিযুক্ত শিক্ষিকার সৌন্দর্য ও বৈষয়িক প্রভাব নিয়ে সমাজে এক ধরনের সহানুভূতি সৃষ্টি হয়েছে বলে সমালোচকদের বক্তব্য। কেউ কেউ বলছেন, পুরুষ অভিযুক্ত হলে এই ধরনের পরিস্থিতি বা আদালতের প্রতি এমন অনুরোধ ভাবাই যেত না। নারী হওয়ায় সামাজিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন রকম হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে।