রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জীবন দিয়ে কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে নিজের দায়িত্ব থেকে একচুল না সরা এই শিক্ষিকা এখন দেশের মানুষের চোখে সাহসিকতার প্রতীক। তার আত্মত্যাগে গর্বিত তার স্বামী মনসুর হেলাল।
মনসুর হেলাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেষ রাতে হাসপাতালে ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। ও আমার হাত ধরে নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছিল। বলেছিল, আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তোমার নিজের দুই সন্তান, ওদের কথা একবারও ভাবলে না? সে বলেছিল, ওরাও তো আমার সন্তান। আমি তাদের একা রেখে আসতে পারিনি।’
মনসুর হেলাল আরও বলেন, ‘আগুন লাগার পর সবাই যখন দৌড়াচ্ছে, তখন মাহেরীন বাচ্চাদের বের করে আনছিল। কয়েকজনকে বের করে আবার ফিরে গিয়েছিল বাকি বাচ্চাদের জন্য। সেই ফেরাটা আর শেষ হয়নি।’
গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস চলাকালে পাশের একটি ভবনে প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় ভবনে। ধোঁয়া আর আতঙ্কে চারপাশ যখন হাহাকার, তখনও শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন মাহেরীন। একপর্যায়ে নিজেই আগুনে আটকে পড়েন। শরীরের অধিকাংশ দগ্ধ হয় তার। তাকে গুরুতর অবস্থায় নেওয়া হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মাহেরীনের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রামে। সেখানেই জন্ম নেওয়া মাহেরীন ছিলেন স্থানীয় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি। পারিবারিক পরিচয়েও ছিলেন একজন পরিচিত মুখ। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তার বাবা মহিতুর রহমান জিয়াউর রহমানের খালাতো ভাই।
আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টায় গ্রামের স্কুল প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ।