Saturday, July 26, 2025

৫ শতাধিক মরদেহ পুড়ে ফেলতে বাধ্য করা হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে

আরও পড়ুন

তিন দশকের অপরাধবোধ শেষে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের এক সাবেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আত্মসমর্পণ করে উন্মোচন করলেন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ধর্ষণ ও গণহত্যার চিত্র।

৪৮ বছর বয়সী দলিত সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তি দীর্ঘ দুই দশক ধরে কর্ণাটকের একটি প্রাচীন ধর্মস্থল মন্দিরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আলজাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসের শুরুতে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন

এবং দেন চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি। তার বক্তব্য অনুযায়ী, মন্দির কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে শত শত লাশ গোপনে পুতে ফেলতে বাধ্য করেছিল। এসব লাশের বড় অংশই ছিল ধর্ষণের শিকার নারী ও কিশোরীর।

আরও পড়ুনঃ  ভাই মাস্ক, তোমার পাশে ১০০ কোটির বেশি মানুষ- ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চীনের খোলা সমর্থন!

জবানবন্দিতে সাবেক ওই কর্মচারী জানান, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চাকরির সময় তিনি অন্তত ৫০০টি মরদেহ গোপনে পুতে ফেলেন। অধিকাংশ মরদেহে ছিল যৌন নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন। কিছু মরদেহ আবার পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। অনেক মরদেহ ছিল অর্ধনগ্ন, কারও গলায় স্পষ্ট দাগ, কারও শরীরে আঘাতের চিহ্ন।

২০১৪ সালে এক আত্মীয় কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। এরপর পরিবারসহ আত্মগোপনে যান তিনি, আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী রাজ্যে। দীর্ঘ ১২ বছর একের পর এক শহর বদলে কাটে আতঙ্ক আর গোপন জীবনে। কিন্তু অপরাধবোধ তাকে কুরে কুরে খেতে থাকে। একপর্যায়ে সাহস করে পুলিশের কাছে হাজির হয়ে সবকিছু জানান।

আরও পড়ুনঃ  গুলির নির্দেশদাতা হাসিনা! উদ্ভট স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জয়ের হাস্যকর কাণ্ড!

প্রত্যক্ষদর্শী এই সাক্ষীর বক্তব্যে উঠে এসেছে বহু পুরোনো অভিযোগের বাস্তবতা। পুলিশের নথিতে দেখা গেছে, ১৯৮০’র দশক থেকে মন্দির চত্বরে যৌন সহিংসতা ও হত্যা-গুমের অভিযোগ ওঠে। একাধিকবার আন্দোলনও হয়, কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সবই চাপা পড়ে যায়।

এই মন্দির দীর্ঘদিন ধরে হেগগাড়ে পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে এর ধর্মগুরু বীরেন্দ্র হেগগাড়ে, যিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ২১তম ধর্মাধিকারী এবং বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য। তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মবিভূষণ’ প্রাপ্ত।

২০১২ সালে ১৭ বছরের এক কিশোরীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড মন্দির কর্তৃপক্ষকে নিয়ে তদন্তের কেন্দ্রে আনলেও, সে মামলার পরিণতি নিয়ে আর কোনো তথ্য সামনে আসেনি।

আরও পড়ুনঃ  হামলার ভয়ে হেলমেটে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে ঘুরছেন যুবক

সাবেক কর্মচারীর জবানবন্দির পর কর্ণাটক সরকার ঘটনাটি তদন্তে একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি গণকবরের সন্ধান মিলেছে এবং একাধিক কঙ্কাল নমুনা হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে, মন্দির কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে সব অভিযোগ অস্বীকার না করে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে সমর্থন জানিয়েছে।

প্রচলিত শ্রদ্ধা আর আস্থার আড়ালে এত ভয়াবহ অপরাধের চিত্র সামনে আসায় ভারতজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বহু ধর্ষণ ও হত্যা-গুমের ঘটনার প্রকৃত রহস্য এবার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ