ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল- নিজেদের মালিকানাধীন অত্যাধুনিক ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে কিছু ইন্টারসেপ্টর ইসরায়েলকে দিতে। তবে রিয়াদ সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে নিশ্চিত করেছেন আলোচনায় জড়িত দুই মার্কিন কর্মকর্তা।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে আঘাত হানার সময় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের মজুতে থাকা ইন্টারসেপ্টর অস্ত্র প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এমন সংকটময় সময়ে সৌদি আরবের সম্প্রতি কেনা ‘থাড’ ব্যাটারির সাহায্য চেয়েছিল ওয়াশিংটন।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম কিছু ইন্টারসেপ্টর দেওয়ার জন্য। কেউ রাজি না হওয়ায় পরে কিছু লেনদেনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।’
৩ জুলাই সৌদি সামরিক বাহিনী নতুন ‘থাড’ ব্যাটারির উদ্বোধন করে। অথচ মাত্র ৯ দিন আগেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। অর্থাৎ, সৌদি তখন নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় মনোযোগী ছিল এবং ইসরায়েলের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, ইসরায়েলকে সহায়তা করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করা হয়েছিল, যারা ২০১৬ সাল থেকেই ‘থাড’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। তবে তারা ইসরায়েলকে ইন্টারসেপ্টর সরবরাহ করেছে কি না, তা নিশ্চিত করেনি কেউ।
এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে পেন্টাগনের পরিকল্পনায় থাকা প্যাট্রিয়ট ইন্টারসেপ্টরের মাত্র ২৫ শতাংশ মজুত অবশিষ্ট ছিল বলে জানায় দ্য গার্ডিয়ান। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব জাহাজ থেকেও স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ ছুড়ে ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিতে বাধ্য হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতসব সুরক্ষা সত্ত্বেও ইরান ইসরায়েলের অন্তত পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়। এতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও অস্ত্র মজুতের ঘাটতি প্রকটভাবে সামনে আসে।
বিশ্লেষক ডগলাস বার্কি বলেন, এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় দুর্বলতা হলো ‘ম্যাগাজিন ডেপথ’ বা অস্ত্র মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।
সৌদি আরবের এই প্রত্যাখ্যান ওয়াশিংটনের জন্য কষ্টদায়ক, বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র ‘মধ্যপ্রাচ্যের ন্যাটো’ গঠনের লক্ষ্যে ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একত্র করার চেষ্টা করছিল।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও অন্য আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে সহযোগী নয় বরং প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে- বিশেষ করে গাজা, লেবানন, পশ্চিম তীর ও সিরিয়ায় ইসরায়েলের একতরফা সামরিক অভিযানগুলোর প্রেক্ষিতে।
ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরাস মাকসাদ বলেন, ইসরায়েলের লাগামহীন আগ্রাসনের কারণে সৌদি অবস্থান আরও কঠিন হয়েছে। ইরান দুর্বল হলেও সৌদি এখন তুরস্কের দিকে ঝুঁকছে, এমনকি ইরানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হওয়ার পথ খুঁজছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এক কূটনীতিক মন্তব্য করেন, আমাদের দৃষ্টিতে এই যুদ্ধ শেষ হয়েছে আমাদের অনুকূলে। কারণ ইসরায়েল বুঝেছে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষের মূল্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে।