দেশের অন্যতম অনলাইন বিমান টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ হঠাৎ করে তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো গ্রাহক ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি। অগ্রিম টিকিট কেনার জন্য যারা টাকা পরিশোধ করেছিলেন, এখন তাদের অর্থ ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভিড় করেছেন অসংখ্য উদ্বিগ্ন ব্যক্তি। বিশেষ করে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতিনিধি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজন। তারা কেউই নিশ্চিত নন, তাদের কাটা টিকিটের ভবিষ্যত কী হবে।
এ সময় ইউনিয়ন ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির মালিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সব শেষ ভাই, আমার ২৫-৩০ লাখ টাকা নাই। আমি শেষ।’ তিনি জানান, তার সব টিকিটই ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে কাটা ছিল।
তবে এসে জানতে পারেন, সেই টিকিটগুলো সরাসরি ফ্লাইট এক্সপার্টের নয় বরং অন্য দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল।
২০১৭ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করা ফ্লাইট এক্সপার্ট এয়ারলাইন টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ এবং ভিসা প্রসেসিংসহ বিভিন্ন সেবা দিত। সহজ এবং কম খরচে টিকিট বুকিংয়ের সুবিধার কারণে তারা দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
তবে একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি নিজে সরাসরি কোনো এয়ারলাইনের কাছ থেকে টিকিট নিত না বরং দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করত।
অভিযোগ রয়েছে, এখন সেই দুই এজেন্সি তাদের কাটা টিকিটগুলো রিফান্ড করে টাকা তুলে নিচ্ছে। ফলে ফ্লাইট এক্সপার্টের সঙ্গে জড়িত অন্য এজেন্সিগুলো চরম সংকটে পড়েছে।
এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন রশিদ হঠাৎ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। ফ্লাইট এক্সপার্টের অভ্যন্তরীণ একটি ফেসবুক গ্রুপে সালমানের একটি বার্তার স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে, যেখানে তিনি দাবি করেছেন—তার দুই কর্মকর্তা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং সেই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই তিনি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ওই দুই কর্মকর্তা তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং পরিকল্পিতভাবে তার ওপর দোষ চাপানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ফ্লাইট এক্সপার্টের হেড অব কমার্শিয়াল সাঈদ আহমেদ বলেন, মালিকপক্ষই টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে অসংখ্য এজেন্সি ও গ্রাহক কোটি কোটি টাকার টিকিট নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় তারা মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জিডিতে বলা হয়, সালমান বিন রশিদ শনিবার কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবারসহ দেশ ত্যাগ করেন এবং কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন।
মতিঝিল সিটি সেন্টার ভবনের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, সালমান নিয়মিত অফিসে আসতেন কিন্তু গত তিন দিন ধরে তিনি অনুপস্থিত।