ফ্লুয়েনএক্সোল ডিপোট ৪০, এই একটি ইনজেকশনের অভাবে ভুগছে লাখো পরিবার। ইনজেকশনটি না পাওয়ায় সিজোফ্রেনিয়া (মানসিক সমস্যা) রোগীদের জীবন এখন দুর্বিষহ। আমদানি বন্ধ হওয়াই সংকটের মূল কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
১১ বছর ধরে সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছেন প্রীতম। মাসে দুটি ‘ফ্লুয়েনএক্সোল ডিপোট ৪০’ ইনজেকশনেই চলছিল তার স্বাভাবিক জীবন। তবে কয়েক মাস ধরে দেশে মিলছে না প্রয়োজনীয় এই ওষুধ। ফলে মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ভর্তি হয়েছেন রিহ্যাবে।
প্রীতম জানান, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তার সিজোফ্রেনিয়া ধরা পড়ে। ১৫ দিন পর ফ্লুয়েনএক্সোল ডিপোট নিতে হয় তাকে। তাহলে অচরণ স্বাভাবিক থাকে।
একই সংকটে ভুগছেন প্রীতমের মা-ও। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা আর আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে দিশেহারা পুরো পরিবার। প্রীতমের বড় ভাই ইমতিয়াজ সাকিব বলেন, ‘সিজোফ্রেনিয়া রোগী যে পরিমাণ কষ্টে ভোগে, তাদের দেখাশোনা করা ব্যক্তিকেও একই কষ্ট পেতে হয়। কাজেই ইনজেকশনটা সচরাচর পাওয়া না গেলে রোগীর পরিবারের ওপর প্রভাব পড়ে।’
শুধু প্রীতম ও তার মা-ই নয়, ফ্লুয়েনএক্সোল ডিপোটের অভাবে এমন অসংখ্য রোগীর জীবন এখন দুর্বিষহ। রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে রোগীদের বক্তব্যের সত্যতাও মেলে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৬ লাখ সিজোফ্রেনিয়া রোগী রয়েছেন। যাদের গুরুতর চিকিৎসায় দেয়া হয় ফ্লুয়েনএক্সোল ডিপোট ৪০ ইনজেকশন। ডেনমার্কভিত্তিক কোম্পানি লুন্ডবেকের উৎপাদিত এই ইনজেকশন দেশে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি বন্ধ রয়েছে। অনেকেই ভারত থেকে এনে এই ইনজেকশন ব্যবহার করলেও সরকার পতনের পর তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি দেশে এই ইনজেকশনের কার্যকরী কোনো বিকল্পও নেই৷
মাইন্ড কিওর সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল হক বলেন, ‘ফ্লুয়েনএক্সোল ডিপোট মানসিক রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী। বাজারে এই ইনজেকশন না থাকায় চিকিৎসকরা এখন আর এটি প্রেসক্রিপশনে লেখেন না। কিন্তু রেজিসটেন্স ক্যাটাগরির যেসব রোগী রয়েছে, তাদের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘ওষুধটি কার্যকরী। তাই যারাই এই ওষুধ আমদানি করছিলেন, তাদের বলবো দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে বাজারে আনতে।’
ওষুধটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লাইলাক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ইনজেকশনের উপকারীতা এতো বেশি যে, অনেক মানসিক রোগী সুস্থ জীবন ফিরে পেয়েছেন। শুধু দুটি পণ্য মার্কেটিং করে লুন্ডবেকের রফতানি খরচও ওঠে না। বাংলাদেশে এই পণ্যের দামও বাড়ানো যায় না। সব মিলিয়ে উৎপাদনকারী কোম্পানি আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। এর ফলে ওষুধটি আর বাংলাদেশের বাজারে দিতে পারছি না। যদি সরকার শুল্ক মওকুফ করে দেয় তাহলে হয়তো আবারও ওষুধটি আমদানি করা যেতে পারে।’
ঢাকা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে ফ্লুয়েনএক্সোল ডিপোটের বিকল্প নেই। ফলে এটা সহজে এভেইলেবল হচ্ছে না। যারা একদমই ওষুধ খেতে চায় না, তাদের জন্য এই ইনজেকশনটা খুবই উপকারী। দেশীয়ভাবে আমরা এই ওষুধটা উৎপাদন করতে পারলে বিশাল অংশ উপকৃত হবে।’
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘ওষুধটা যে দেশেরই হোক না কেন, এটি ব্যবহারের জন্য রোগী ওষুধ প্রশাসনের অধিদফতরে আবেদন করলে, সেটা এনে দেয়ার রাস্তা রয়েছে। এছাড়া কোনো স্পেশিয়ালিস্ট বা ফিজিসিয়ান যদি বলেন তার পণ্যটি বেশি দরকার, নিশ্চয়ই আমাদের মহাপরিচালক কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।’