Sunday, August 10, 2025

৩৩ বছর বয়সে মালদ্বীপে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত! কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতুহল

আরও পড়ুন

তরুণ শিক্ষাবিদ ড. মো. নাজমুল ইসলামকে মালদ্বীপে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তার এই নিয়োগ দেশের কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে গত ২৭ জুলাই ড. নাজমুল ইসলামকে মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাই কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তাকে অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। এরপর গত ৩ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আবুল হাসান মৃধার সই করা অফিস আদেশে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ন্যাস্ত করে মালেতে হাই কমিশনার হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

আরও পড়ুনঃ  হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ২ মন্ত্রীসহ ৮ জনের মৃত্যু

প্রসঙ্গত, ছাত্রদল সংশ্লিষ্টার অভিযোগ এনে ২০১৩ সালের আগস্টে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়ে তার হাত-পা ভেঙে যায়। এই ঘটনার পর তিনি দেশে পড়াশোনা ছেড়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান। এই কঠিন অভিজ্ঞতা তাকে ভূ-রাজনীতির গভীর অনুসন্ধানে উৎসাহিত করে, যা তাকে আজ বিশ্ব মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ড. নাজমুল ইসলাম নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তুরস্ক সরকারের বৃত্তি নিয়ে আঙ্কারা ইলদিরিম বেয়াজিট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করে সেখানেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

আরও পড়ুনঃ  পাহাড়ের একটি গুহা থেকে দুই সন্তানসহ রুশ নারী উদ্ধার, চাঞ্চল্যকর যে তথ্য দিল পুলিশ

শিক্ষাবিদ হিসেবে তার অবদান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। তার লেখা বহু গ্রন্থ ও গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে, যা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন এমআইটি, হার্ভার্ড এবং অক্সফোর্ডের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। তাঁর অন্যতম আলোচিত একটি তত্ত্ব হলো ‘পাওয়ার অব বন্ডিং’, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষেত্রে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।

তুরস্কে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি দেশটির পার্লামেন্টে ফরেন রিলেশন্স অ্যান্ড প্রটোকল ডিপার্টমেন্টে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। শতবছরের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি হিসেবে তার এই নিয়োগ ছিল একটি বিরল সম্মান। এর বাইরে ড. নাজমুল ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এস্টেট এর ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের সাউথ এশিয়ায় নিয়োগ পান। সেখানে তিনি গেস্ট লেকচারার হিসেবে অধ্যাপনা করছেন।

আরও পড়ুনঃ  ইরানের নতুন যুদ্ধ কমান্ডারের নাম জেনে গেছে মোসাদ

এছাড়া তিনি জাতিসংঘ, ওআইসি এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানে তাঁর কূটনৈতিক ও একাডেমিক উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য।

২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সিভিল সোসাইটিতে আন্দোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন ড. নাজমুল। তার এই সাহসী ভূমিকা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ