রাজশাহীতে শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ দিয়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ার পর ধরা পড়েছেন বাঘা পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তফিকুল ইসলাম ওরফে তফি।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের তদন্তে তার জাল সনদের বিষয়টি ধরা পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তার সভাপতির পদ বাতিল করতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক শামীম হাসান। পাশাপাশি ওই চিঠিতে নতুন সভাপতি পদের তালিকা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এসব প্রমাণাদি যুগান্তরের হাতে এসেছে।
রাজশাহীর বাঘা উচ্চবিদ্যালয়ে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। জাল সনদ দিয়ে সভাপতি হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করার কাল্পনিক অভিযোগ এনে বাঘা পৌরসভা যুবদলের ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিএনপি নেতা বাঘা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র তফি।
এছাড়াও তফির বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এবং হাট-ঘাট, পুকুর দখলসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তবে তফি এবং তার বাহিনীর ভয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে স্নাতক বা সমমান। তফির সেই যোগ্যতা নেই। এরপরও তিনি বাঘা উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, তফি উচ্চমাধ্যমিক পাশও করেননি। ক্ষমতার দাপটে তিনি বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে জাল সনদ দিয়ে সভাপতি হয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সভাপতি হওয়ার সময় তফি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান মোহাম্মদ আলীকে বিএ (ব্যাচেলর অব আর্টস) পাশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সনদ জমা দেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিএ পাশ করেছিলেন দাবি করে সনদটি প্রদান করেন। সনদটির রোল নম্বর ২৬০৫১২ এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬৫২২৬১। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে সনদটি জাল।
নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাঘা উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের চার সদস্যের অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করে। এ কমিটিতে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত হিসাবে সভাপতি হন বাঘা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তফিকুল ইসলাম তফি।
সম্প্রতি তফির বিরুদ্ধে শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় যে, তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ দিয়ে সভাপতি হয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে শিক্ষা বোর্ড বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। জেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব ৯ জুলাই শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তফিকুলের সনদটির সঠিকতা পাওয়া যায়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৭ আগস্ট শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক শামীম হাসান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি তফিকুল ইসলামের সনদ জাল প্রমাণিত হয়েছে। তাই তার সভাপতির পদ বাতিল করে শিক্ষা বোর্ডে নতুন সভাপতির নাম প্রস্তাব করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বাঘা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী দেওয়ান বলেন, ‘তফিকুল ইসলাম যেভাবে আমাদের তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে জমা দিয়েছি। এই সনদ জাল কি না, সেটা তখন জানতাম না। আজ (সোমবার) ওয়েবসাইট থেকে চিঠি ডাউনলোড করে দেখছি যে, তার সনদটি জাল ছিল।’
হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বাঘা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তফিকুল ইসলাম আমার নেতা। আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করিনি। শুনেছি, জাহাঙ্গীর নামে কোনো এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নাম এক হওয়ায় আমাকে সেই জাহাঙ্গীর মনে করে রোববার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তফি ভাই হাত-পা কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গালাগাল করেছেন। এখন আমি নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছি।’
জাল সনদে সভাপতি হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সোমবার দুপুরে বিএনপি নেতা তফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি। এরপর তার হোয়াটসঅ্যাপে জাল সনদের সব প্রমাণাদি পাঠানো হয়। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন জানিয়েও তার মন্তব্য চাওয়া হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। এর আগে রোববার রাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’