Monday, August 18, 2025

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, কী ঘটেছিল সেই স্কুলে

আরও পড়ুন

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র তাসিন তালহা (৭)-কে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আরও গুরুতর রূপ নেয় যখন ওই শিক্ষক শিশুটির বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন। ঘটনাটি এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে তালহার মা তাসলিমা আখতারসহ বিদ্যালয়ের ২৫ জন অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা দ্রুত বিদ্যালয়ে যান এবং পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বদলির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১২ আগস্ট প্রতিদিনের মতো তাসিন তালহা অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যায়। ওই দিন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম শ্রেণিকক্ষে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া অনুশীলনের জন্য শিক্ষার্থীদের লিখতে দেন। তালহা ছড়াটি লিখলেও বেশ কয়েকটি বর্ণ ভুল করে এবং কিছু শব্দ ছোট-বড় অক্ষরে লেখায় শিক্ষক ক্ষিপ্ত হন। পরে ক্লাসে কথিত বিশৃঙ্খলার অভিযোগে তিনি তালহাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এতে তালহার পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।

আরও পড়ুনঃ  কলেজে ভর্তি আবেদন শুরু ২৪ জুলাই, বাড়ছে ফি ও নতুন কোটা

পরবর্তীতে স্কুলের সমাবেশ চলাকালে লাইন সোজা না থাকার অজুহাতে আবারও তালহাসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে শাস্তি দেন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।

স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে ঘটনাটি মাকে জানায় তালহা। বিষয়টির কারণ জানতে শিশুটির মা তাসলিমা আখতার বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নজরুল ইসলাম গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে বলেন- ‘তাসিন তালহা এক মাস আগে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে।’ এই বক্তব্যে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান এবং এলাকাজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

শিশুটির মা তাসলিমা আখতার বলেন, ‘সেদিন দুপুরে আমার ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে এবং জানায়-স্কুলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। আমি বিষয়টি জানতে বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার ছেলে এক মাস আগে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছে এবং লেখাও খারাপ করেছে। আমি বিস্মিত হয়ে যাই-দ্বিতীয় শ্রেণির একটি শিশু কীভাবে চাঁদা চাইতে পারে? একজন শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এমন গুরুতর অভিযোগ করতে পারেন!’

আরও পড়ুনঃ  এসএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামার ঘোষণা

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং নিজের দোষ আড়াল করতেই শিক্ষক এই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই শিক্ষা কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর ইসলাম কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। অল্প কিছুতেই ছোট শিশুদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এমনকি সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও তিনি ছাড় দেন না। এছাড়া প্রশংসাপত্র দেয়ার সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করেন। তার এই আচরণের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দ্বিতীয় শ্রেণির একটি শিশু চাঁদা চাইবে-এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিজের দোষ ঢাকতেই তিনি মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’

সেবা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘নজরুল ইসলাম কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে প্রায় সময় খারাপ আচরণ করেন। ছোটখাটো বিষয়কে বড় করে শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ ও মারধর করা হয়।
তাকে আমরা এই স্কুলে দেখতে চাই না।’

আরও পড়ুনঃ  সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা!

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাস খানেক আগে ওই ছাত্র আমার কাছে এসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। সেদিন ক্লাসে হট্টগোল করায় তাকে ক্লাস নিয়ন্ত্রণের জন্য মেরেছি, যা ঠিক হয়নি। এছাড়া কম্পিউটার থেকে প্রশংসাপত্র তৈরির খরচ মেটাতে অল্প পরিমাণে অর্থ আদায় করি, তবে সবার কাছ থেকে নয়। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র চাঁদা চেয়েছে বিষয়টি বিশ্বাস যোগ্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ সে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট শিশুটির অভিভাবক একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধর ও শিশুটির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা তাসলিমা আখতার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ