কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন মাস্টার জড়িত বলে অভিযোগ করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রুমা আক্তার।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে মা, ভাই ও বোনকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রুমা আক্তার। সেখানে এ দাবি জানান তিনি।
রুমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের পরিবারের ৩ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
এটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমার মায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে। আমার মা এর আগে ইউনিয়ন পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু শিমুল চেয়ারম্যানের জন্য নির্বাচিত হতে পারেননি। গ্রামের অসহায় মানুষেরা নানা কারণে আমার মায়ের কাছে আসতেন।
এটা শিমুল চেয়ারম্যানের সহ্য হতো না। এ কারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল মাস্টারের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘ওই দিন সকাল ৬টায় ঘটনার শুরু হয়। ওপরের নির্দেশ না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না।
আমি ও আমার ছোটবোন আড়াই ঘণ্টা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। ৯৯৯-এ ফোন দিয়েছি। কোনো সহযোগিতা পাইনি। থানা থেকে আমাদের বাড়িতে পুলিশ আসতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট। কিন্তু ৬টার ঘটনায় পুলিশ আসে ৯টার পর।
আমি থানার ওসির ওপর সন্তুষ্ট। আমি তার কারণে আজ বেঁচে আছি। কিন্তু আমি ওসিকে ফোন দিইনি। আমি ফোন দিয়েছিলাম এসআই নাহিদকে। আমার ও এসআই নাহিদের কললিস্ট চেক করলে বুঝতে পারবেন আমি কতবার কতভাবে সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু তিনি আসছি, আসতেছি, ৫ মিনিট, একটু ওয়েট করেন এসব বলে কালবিলম্ব করেন।’
তিনি আরো বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পর যারা মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছেন তাদের একজন মোস্তফা। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমরা গতকাল সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ পরিবারকে শেষ করে দেব।’ তার মতো যারা মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছেন তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। ঘটনার পর পুলিশ চাইলে প্রত্যেক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারত। কারণ ঘটনার পরও শিমুল চেয়ারম্যান বাড়িতে ছিলেন এবং মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছেন। শরিফকেও তারা গ্রেপ্তার করেনি।
রুমা বলেন, ‘আমি আগেও বলেছিলাম আজও বলছি, আমি না-ও বেঁচে থাকতে পারি। আমি এখনো অসুস্থ। শরীরে অসংখ্য সেলাই। কেবল মনের সাহসে আপনাদের সামনে এসেছি। আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এত নির্মমভাবে কেউ কাউকে মারে না। আমাকে রাম দা দিয়ে কুপিয়েছে। এরপরও আমি কোনো বিচার পাচ্ছি না। আজ প্রায় ২ মাস হয়ে যাচ্ছে, ঘটনার দ্বিতীয়দিন র্যাব কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আর কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। প্রশাসন ইচ্ছা করলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব আসামিকে ধরতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মা বিএনপি করতেন। যার জন্য ওই আমলে তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা দেওয়া হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডে উপদেষ্টার বাবা জড়িত। সাংবাদিকরা সত্য উন্মোচন না করলে আমি বিচার পাব না। কি অপরাধ ছিল যে, তাদের এত নির্মমভাবে মারা হলো! তিনজনকে হত্যার ঘটনায় ৭টি শিশু এতিম হয়েছে। তারা আমার ওপর নির্ভরশীল। আমি কার জন্য কান্না করব? আমার মায়ের জন্য, ভাইয়ের জন্য, নাকি বোনের জন্য। ঘটনা মনে হলে আমি ভাষা খুঁজে পাই না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রথম দাবি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল মাস্টারকে গ্রেপ্তার করুন। তাকে গ্রেপ্তার করা হলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে। শিমুল চেয়ারম্যান ও শরিফদের গ্রেপ্তার করা হলে সত্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তা না করে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি স্বজন হারিয়েছি। আমার কোনো দল নেই। আমরা বিচার চাই। যারা জড়িত ছিল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করুন। এখানে কেউ কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।’
রুমা বলেন, ‘এর আগে সংবাদ সম্মেলন করার কারণে আমার বাবাকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমাকে তারা হন্যে হয়ে খুঁজছে। প্রশাসন আমাদের কোনো নিরাপত্তা দিচ্ছে না। কোনো দল আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। কোনো বিচার নেই। আমাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। আমরা অসহায়।’