‘‘যদি ভারতের সরকার সত্যিই দেশ থেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে প্রথমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই ফেরত পাঠানো উচিত। যিনি ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে বসবাস করছেন।’’ বৃহস্পতিবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদের এমপি ও দেশটির রাজনৈতিক অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এই মন্তব্য করেছেন।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ‘আইডিয়া এক্সচেঞ্জ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভারত থেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন আসাদউদ্দিন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে প্রশ্ন করে হায়দরাবাদের এই এমপি বলেন, ‘‘আমরা কেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে (শেখ হাসিনা) দেশে রাখছি? তাকে ফেরত পাঠানো হোক। তিনিও তো বাংলাদেশি, তাই না?’’
আসাদউদ্দিন বলেন, ঢাকায় যে ‘জনপ্রিয় গণঅভ্যুত্থান ’ ঘটে গেছে ভারতকে সেটি মেনে নিতে হবে এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
‘‘ভারতে একজন বাংলাদেশিকে রাখা হয়েছে, যিনি বিবৃতি ও বক্তব্য দিয়ে সমস্যা তৈরি করছেন; অথচ মালদা ও মুর্শিদাবাদের দরিদ্র বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয়দের পুনে থেকে কলকাতায় বিমানে পাঠিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’’
আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ভারতে যিনিই বাংলা ভাষায় কথা বলবেন, তিনিই বাংলাদেশি হয়ে যাচ্ছেন? এ থেকে বোঝা যায়, এখানে বিদেশাতঙ্ক কাজ করছে।’’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ কীভাবে এসব মানুষকে আটক কেন্দ্রে রাখছে। এখানে সবাই যেন স্বঘোষিত আইনরক্ষক হয়ে উঠেছেন। ওয়াইসি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিহারে চলমান ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় অনেক প্রকৃত নাগরিক; বিশেষ করে মুসলমানরা বাদ পড়তে পারেন।
আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, যদি এসআইআর হয় এবং প্রকৃত ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ সময় তিনি বিহারে তার দলের অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা আছে, যদি কোনও নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) কাউকে সন্দেহজনক মনে করেন বা তিনবার গিয়ে তাকে না পান, তাহলে তিনি নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। তার অভিযোগ, এ প্রক্রিয়ায় মুসলিম ভোটারদের নামই বেশি বাদ পড়ছে।
জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে গত ৭ মে সন্ত্রাসী হামলার পর বিজেপি নেতা বৈজয়ন্ত পান্ডার নেতৃত্বাধীন গঠিত সংসদীয় তদন্ত দলে ওয়াইসিও ছিলেন। সেই ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ নষ্ট করেছে।
‘‘আমাদের প্রতিনিধি দলকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন দেশ আমাদের জিজ্ঞাসা করেছে, কেন আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলি না। আমরা বলেছি, বহুবার কথা হয়েছে, কিন্তু কোনও ফল আসেনি। আমরা ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে এবং পাকিস্তানকে ভারত ধ্বংস করতে চাইছে, এমন প্রোপাগান্ডা ভাঙতে পেরেছি।’’
দেশটিতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের নীরবতারও সমালোচনা করেছেন ওয়াইসি। তিনি বলেন, এই রাজনীতি নতুন নয়। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে এটি ভিন্ন রূপ নিয়েছে।
ওয়াইসি বলেন, অনেক তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দল সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বলতেই ভয় পাচ্ছে। ৭/১১ ট্রেন বিস্ফোরণের রায় বা ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ; এসব নিয়ে তারা মুখ খোলে না। এটা কেবল সংখ্যালঘুদের বিষয় নয়, বরং অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রশ্ন।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রসঙ্গ টেনে ওয়াইসি গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে মোদি সরকারের নীরবতার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করছে।
‘‘আমরা শুধু চুপ করে আছি। গাজায় যে গণহত্যা চলছে, সে বিষয়ে এই সরকার কিছুই বলছে না। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বর্ণবাদী সরকার ইতোমধ্যে ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ২০ হাজার শিশু। প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি শব্দও বলেননি। এরপর আবার বলেন, আপনি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে। যখন প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে, তখন সেই রাষ্ট্র কোথায় দাঁড়াবে? প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার আসলে নীরব থেকে নেতানিয়াহুকে এই গণহত্যায় সমর্থন করছে।’’
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।