Monday, September 1, 2025

একটা লোককে ভিপি বানাতে ডাকসু আয়োজন করা হচ্ছে, অভিযোগ মেঘমল্লার বসুর

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। এর ফলে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে আর কোনো আইনি বাধা নেই। নির্বাচনের এমন পরিস্থিতিতে একটা লোককে ভিপি বানাতে ডাকসু আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেঘমল্লার বসু।

সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে এ অভিযোগ করেন তিনি।

মেঘমল্লার বসু অভিযোগ করেন, একটা লোককে ডাকসুর ভিপি বানানোর জন্যই ডাকসু আয়োজন করা হইতেসে। এক সেশানে দুই বার এমফিলে ভর্তি নেওয়া হইতেসে। সেই লোক আবার ক্যামেরায় আইসে বলতেসে ডাকসুর কাজ নেতা প্রোডিউস করা না।

তিনি বলেন, বর্তমানে দাঁড়ায়ে যে যত বড় অরাজনৈতিকতার ধ্বজাধারী ততবড় রাজনৈতিক এজেন্ডা তার, এটাই বাস্তব। কিছু লোক ইলেকশানে দাঁড়ই হইসেন প্রেশার গ্রুপের কাজ করতে। পার্টিকুলার কিছু অর্গানাইজেশনের অনুকূলে যেন সব কিছু থাকে অন্য প্যানেলে দাঁড়ায়ে সেটা এনশিওর করতে।

বসু লিখেন, সেপ্টেম্বরের ৫-৬ তারিখ হল শুক্র আর শনিবার। ৭ তারিখ থেকে পরীক্ষা এবং ক্লাস বন্ধ। ৬ দিনের ছুটি দেওয়ার অর্থ হইল পোলাপানরে পক্ষান্তরে ট্যুর প্ল্যান করতে বলা। ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর এক তৃতীয়াংশও ভোট দিতে আসবে না এটা বুঝাই যাইতেসে। আমরা বলসিলাম পরীক্ষা বন্ধ দেন যাতে প্রার্থীরা প্রচারণা করতে ও ভোটাররা প্রচারণা শুনতে পারে। ক্লাস রাখেন যাতে পোলাপানের ক্যাম্পাসে থাকার ন্যূনতম ইন্সেন্টিভ থাকে। ৭ তারিখের পর এমনেই প্রচারণা বন্ধ। ৭ তারিখ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ কইরে কার উপকার করলেন? কার দাবি মানলেন?

তিনি অভিযোন করেন, প্রার্থীরা ম্যানিফেস্টো দিচ্ছেন যে এক হলের মেয়েরা যাতে আরেক হলে ঢুকতে পারে সেটা নিশ্চিত করবেন। অথচ বেশ কয়টা প্যানেলের প্রার্থীদের প্রচারণাই মেয়েদের হলে করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নারী প্রার্থী ছাড়া আর কেউ প্রচারণা করতে হলে ঢুকতে পারবে না। এইটা নিয়ে কারো আবার বিশেষ চাপ নাই। প্রচারণার সময় দিসেন মাইরে কাইটে ১৩ দিন, নারী শিক্ষার্থী ২০ হাজার। হলে রাজনীতি করতে দেন নাই। হলের প্রচারণায় এত আবাসিক নারী শিক্ষার্থী আমরা পাব কই? আমাদের কি হলের ভিতর সংগঠনের একটা প্রোগ্রাম করতে পারসি যে দশটা আবাসিক মেয়েকে এনগেজ করতে পারব? অথচ ধর্মীয় চর্চার নামে ছাত্রী সংস্থা প্রতিটা হলে তার অবস্থান তৈরি করসে। গত জানুয়ারিতে রাগের ঠেলায় বলসিলাম তাহলে আমাদেরও গুপ্ত হয়ে যাওয়া উচিত। আসলেই তাই করা উচিত ছিল। এই দেশে কোনো দিনই ন্যায্যতা আসবে না। যারাই বাই দ্য বুক রাজনীতি করার ট্রাই করবে বিপদ তাদেরই।

আরও পড়ুনঃ  ভাড়া চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, বিএনপির ৫ নেতা বহিষ্কার

পোস্টে তিনি লিখেন, এই সময়টায় ডেমোক্রেটিক ফোর্সগুলার থাকতে হইত মিলেঝিলে। কিন্তু ‘বাম’ ট্যাগের ভয়ে যারা সামনের দিনের বড় নেতা হবে তারা অর্ধেক লিবারেল অর্ধেক রিএকশনারি প্যানেল বানাইলেন। জাহাঙ্গীরনগরে যেই রোলটা অনায়াসে প্রাপ্তি নিতে পারলেন সেই রোলটা সাবেক ফেডারেশন নেত্রী নিতে পারলেন না স্রেফ পপুলিজমের রোগে আক্রান্ত হয়ে। এইগুলার ফল আগামী দিনের রাজনীতিতে দেখবেন, কিন্তু তখনও কেউ দায় নিবে না। কারো কোনো ‘কওম’ নাই, কাউরে বাঁচানোর তাগিদ নাই।

তিনি অভিযোগ করেন, গত পরশু শিবিরের প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণ আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিলেন। চাকমা ও পিকিংপন্থি কমিউনিস্টদের অবদানকে খারিজ করলেন। গোটা আলোচনাকে সেই দিকে কীভাবে নেওয়া যায় সেইটা যখন আমি সবার সাথে কথা বলে ম্যানেজ করতেসি তখন জানতে পারলাম এক এটেনশান সিকার হুদাই এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে করসে রিট। গোটা আইনী কাঠামো জামায়াতের হাতে। এই রিট জীবনেও কোনো রেজাল্ট আনবে না। যদি কোনো দৈবচক্রে আনেও সেটারে অনায়াসে নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে ফ্রেম করা যাবে। এটাই মুজিববাদী বামদের একমাত্র কন্ট্রিবিউশান গত এক বছরে। যখনই আমরা তিলে তিলে, সর্বোচ্চ স্ট্র‍্যাটিজিকাল হয়ে একটা বৃহত্তর শিবির বিরোধী মেরুকরণ তৈরি করব ঠিক তখনই এটেনশান গ্র‍্যাব করার জন্য তাদের উদ্ভট ও উৎকট কিছু একটা করতেই হবে। কালকে এস এম ফরহাদের ভোট বাড়া ছাড়া কমে নাই। অবশ্য লাভ মুজিববাদী বামদেরও হইসে। লেফট-লিবারালদের সংযুক্ত প্যানেল বাদেও যে ‘বাম’দের আরেকটা প্যানেল আছে এটা ক্যাম্পাসের লোকজন জানতে পারসে। শিবির-বিরোধিতা এদের কাছে একটা গিমিক। ক্যাম্পাসটায় কেমনে প্রতিক্রিয়াকে রোখা হবে এটা এদের চিন্তায়ও থাকে না। এই একই রিট করার কথা আমারে অন্তত তিনটা আলাদা আলাদা রাজনৈতিক পক্ষ করতে বলসে। আমি প্রত্যেককে নিরস্ত করসি। কিন্তু তালেবরদের সাথে কে পারবে?

আরও পড়ুনঃ  আওয়ামী লীগের নতুন ছক, প্রধান ৩টি টার্গেট চূড়ান্ত

বসু লিখেন, আমি রাজনীতিবিদ না। অন্যভাবেও যে রাজনীতি করা যায় আমি স্রেফ এইটা ডেমোন্সট্রেট করতে রাজনীতিতে নামসিলাম। আমি আওয়ামী লীগ আমলে জান-প্রাণ দিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করসি। এই ছদ্ম-জামায়াতি আমলে জানপ্রাণ দিয়ে শিবিরকে রেজিস্ট করব। এর বাইরে আমি কিছু পারি না। গত এক মাসে আমারে নিয়ে যা যা হইসে, বাপের শ্রাদ্ধের ছবি নিয়ে মকারি পর্যন্ত তার সব কিছু আমি চুপ করে সহ্য করসি কারণ প্রচুর মানুষ আমাদের পলিটিক্সে ইনভেস্টেড হইসে। কিন্তু আমার শুভানুধ্যায়ীদেরও বুঝতে হবে যে, আমি আমি হইসি যাইচ্ছাতাই করেই। আওয়ামী লীগ বা জামায়াত স্ট্যাবলিশমেন্টের সঙ্গে ফাইট করার বহু আগে আমি ফাইট করসি সিপিবির স্ট্যাবলিশমেন্টরে। কাজেই নির্বাচন কেন্দ্র করে কেউ আমারে সঙ সাজায়েন না। পিআর ম্যানেজমেন্ট যারা করতেসেন, স্ট্র‍্যাটিজি ঠিক করতেসেন, তারা এত লোড নিয়েন না। ক্যাম্পাসে আমি এত দিন করসি হাসিনা বিরোধী রাজনীতি। ডিইউডিএসও করি নাই, জেলা সমিতিও করি নাই, কোনো স্ট্রাকচারাল সেটাপও দাঁড় করাই নাই। সারাজীবন রেবেল ছিলাম, সেটাই থাকতে দেন। ১০ দিনের জন্য একটা ইমেজ রিব্র‍্যান্ডিংয়ের চেষ্টা কইরেন না।

তিনি লিখেন, আমরা জিতব এই রেভ্যুলেশনারী অপটিপিজম নিশ্চয়ই ভালো জিনিস। কিন্তু অবাস্তববাদী হওয়া ভালো না। আমরা কোনোদিন হলের ছেলেপেলেরে এক্সেসই করতে পারি নাই। পুরাটা সময়ই ডেস্পারেটের মতো হাসিনা বিরোধিতায় ব্যস্ত ছিলাম। ফলে আমাদের গ্রাউন্ড খুব একটা ভালো এমন না। মানুষ ভোট দেয় তারে, যারে সে উঠতে বসতে দেখসে। বাকের, ফরহাদ, মাহিন এদের সবারই হলগুলোয় নিজস্ব সেটাপ আছে। একদিন ডাকসু নির্বাচন করা লাগবে এই চিন্তা করে কখনোই সেই সেটাপ তৈরি করি নাই। কোন হলে আমার ভোট আছে আমি নিজেই জানি না। নির্বাচন এত জরুরি কিছু না। নির্বাচনকে কাজে লাগায়ে নিজেদের ফুটপ্রিন্ট বড় করা জরুরি, রেজিমেন্টেশান শেখা জরুরি, সর্বোচ্চ এফোর্ট দেওয়া জরুরি, প্রতিক্রিয়ার ফোর্সকে ঠেকানো জরুরি। কিন্তু নির্বাচন জেতার ডেস্পারেশানে নিজেদের হারায়ে ফেলা, উচিত কথা বলা থেকে বিরত থাকা জরুরি না। এমনেও এই ডাকসু হওয়ার পরে আবার বহুকাল ডাকসু হবে না। অবশ্য ডাকসুতে শিবির জিতলেও চাপ নাই। এই গায়ে কিছু না লাগানো এপলিটিকাল লিবারেল পোলাপানের শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে।

আরও পড়ুনঃ  শিবির জনশক্তি দিয়েছে, ছাত্রদল প্রতিরোধ করেছে: মাহফুজ আলম

মন জয় করতে আসি নাই। আমি কঠিন কথা বলি, পক্ষে গেলে মানুষ খুশি হয়, বিপক্ষে গেলে রাগ করে। মনোরঞ্জন করতে বইলেন না। যা হবে দেখা যাবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমার প্রধান প্রতিপক্ষ আমার শারীরিক স্বাস্থ্য। ক্যাম্পেইনের এহেন পর্যায়ে ভর্তি হইতে যাচ্ছি হাসপাতালে। কয়েক মাস বেড রেস্ট নেওয়ার কথা ছিল, পারি নাই। এখন কয়দিন থাকতে হবে জানি না। ছাইড়ে দিলে প্রচারণা করব। না পারলে ভোটারের উপর ছাড়া থাকল। আমি তো মানুষের সাথে সেইভাবে দেখাও করতে পারি নাই। জিতি হারি পোলাপানের কাছে যাবনে। গল্প করবনে। নির্বাচন নিয়ে এত চাপ নেওয়া যাচ্ছে না। আপনারাও নিয়েন না। দয়াল ভরসা।

পোস্টের শেষে লিখেন, পুনশ্চ: মিডিয়ার কেউ আর দয়া করে ৯ তারিখ পর্যন্ত কল দিয়েন না। আপনারা ক্রমাগত ক্যাম্পাসের ছেলেপেলেদের প্রাইভেসি নষ্ট করতেসেন এবং সারাদেশের সকল জরুরি বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করতেসেন। এর বিরুদ্ধে এটা ক্ষুদ্র একটা মানুষের নীরব প্রতিবাদ। আমি জানি এতে আমার জেতার সম্ভাব্যতা কমাবে। ডাজেন্ট ম্যাটার। ইন্টেগ্রিটি ছাড়া আমার আর কোনো সম্বল এমনেও নাই।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ