আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের আগে চারটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতিও চলমান। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকুস), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চকসু) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)।
আর এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে নতুন কৌশলে এগোচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগ। কৌশল বাস্তবায়ন করতে নতুন করে নির্দেশনা আসছে বিদেশে পলাতক আওয়ামী নেতাদের কাছ থেকে। তাদের মূল টার্গেট জাতীয় সংসদ এবং চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পুলিশের সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আইজি পুলিশ সদর দপ্তর এবং সাজ্জাত আলী ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে যুক্ত হন। ডিএমপি এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, আইজিপির সঙ্গে জুম মিটিং শুরুর আগে ডিএমপির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনার। ওই বৈঠকের আলোচনায় বিদ্যমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে।
বৈঠক শেষে ডিএমপির উচ্চপর্য়ায়ের সূত্র জানায়, ডাকসু-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনকে অলআউট সাপোর্ট দেবে ডিএমপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছে, সব ধরনের সহযোগিতাই করা হচ্ছে। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে এরই মধ্যে প্যাট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। মোটরসাইকেল প্যাট্রোলিংয়ের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। শাহবাগে সার্বক্ষণিক সময়ের জন্য এক প্লাটুন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ডেপ্লয়মেন্ট আরও বাড়ানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি পয়েন্টে থাকবে সার্বক্ষণিক স্ট্রাইকিং ফোর্স। ডিএমপি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের মধ্যে আরও সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডিএমপির সহকারী কমিশনার এবং অতিরিক্ত উপকমিশার পদপর্যাদার কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সোমবার বিকাল ৩টার পর থেকে তারা যেন একা একা বের না হন। কোথাও যেতে হলে তারা যেন ফোর্স নিয়ে যান। কমিশনার আর কী কী নির্দেশ দিয়েছেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ যাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অপতৎপরতা চালাতে না পারে, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। ডাকসু নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর একটি মিডিয়া হাউজ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন। ক্যাম্পাসের সুবিধাজনক স্থানে থাকবে মিডিয়া হাউজ। মিডিয়াকে কোনো কিছু জানানোর প্রয়োজন হলে সেখানে এসেই ব্রিফ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে চাইলে সূত্র জানায়, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। তারা যে কোনো মূল্যে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। রোববার ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আওয়ামী লীগ যে মিছিল করেছে, সেটিও ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ। সেই মিছিলে অংশ নেওয়া একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম মিজানুর রহমান। তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। তিনি এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার নির্দেশনা এসেছে ভারত থেকে। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ তারা করছেন। বিষয়টি আইজিপিকে অবগত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, গুজব প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন আইজিপি বাহারুল আলম। আইজিপির বক্তব্যের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অপশক্তি সক্রিয় আছে। সর্বোচ্চ পেশাদারির সঙ্গে এই অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে। আওয়ামী লীগ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে, সে বিষয়ে তৎপর থাকার নির্দেশ দেন আইজিপি। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে গোয়েন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে ডিএমপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ডাকসু নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ডাকসু নিবার্চন-২০২৫ উপলক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় কমিশনার এ কথা বলেন বলে জানানো হয়েছে। আরও জানানো হয়েছে, ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সব নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ডিএমপি প্রস্তুত। সভার শুরুতে ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এরপর সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন। সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম, হাসান মো. শওকত আলী, মাসুদ করিম, শফিকুল ইসলাম, জিললুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, ডাকসু নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।