Friday, July 18, 2025

বাবার হত্যা নিয়ে যে গোপন তথ্য ফাঁস করলেন সেই সোহাগের মেয়ে

আরও পড়ুন

আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? বাবাকে যারা হত্যা করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই’- ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে নৃশংসভাবে খুন হওয়া লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের ১৪ বছরের মেয়ে সোহানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই আকুতি জানায় রাষ্ট্রের কাছে। বাবার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে তার এই কান্না ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত সবার হৃদয়ে।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকা থেকে নিহত সোহাগের লাশ নিয়ে বরগুনায় পৌঁছান তার স্বজনরা। পরে সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সকাল থেকে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা ভিড় করেন তার বাড়িতে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোহাগের বয়স যখন মাত্র ৭ মাস তখন বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তার বাবা আইউব আলীর। এরপর তার মা আলেয়া বেগম তিন সন্তানকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকা চলে আসেন। ছোটবেলা থেকেই সংগ্রামের মধ্যে বেড়ে ওঠা সোহাগ পরে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি দোকান দেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই দোকান থেকেই জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ, যে সিদ্ধান্ত নিলো সংগঠন

দোকান চালানোর সময় থেকেই একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছিল। সোহাগ চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া। একপর্যায়ে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও তিনি মাথা নত না করে নিজের অবস্থানে অটল থাকেন।

বুধবার বিকেলে সোহাগকে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় একদল যুবক। দাবি করা হয় চাঁদার টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আটকে রেখে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয় তাকে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায়, দিনের আলোয়, শত মানুষের মাঝে।

আরও পড়ুনঃ  ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি: যুবদলের সাবেক নেতাসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিহত সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল কয়েকজন। আমার স্বামী রাজি হননি। তারা সহ্য করতে পারছিল না যে, চাঁদা না দিয়ে কেউ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তারা আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে।

সোহাগের বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ভাই ১০-১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিল। সেই ব্যবসা নিয়েই হিংসা, প্রতিহিংসা-সবকিছু। তারা দোকানটা দখল করতে চেয়েছিল। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিল বহুদিন। শেষ পর্যন্ত ওকে পাথর মেরে খুন করেছে।

আরও পড়ুনঃ  আলোচিত ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’, যেভাবে রাজমিস্ত্রি থেকে সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান আয়েশা!

শুধু পরিবারের লোকজনই নয়, এলাকায় যারা সোহাগকে চিনতেন, তারা জানান—তিনি ছিলেন মেহনতী, নম্র এবং পরিশ্রমী মানুষ। কখনো কারো সঙ্গে বিরোধে জড়াননি। তার একমাত্র ‘অপরাধ’ ছিল, তিনি চাঁদা দিতে রাজি হননি।

তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল একটি সংসার, একটি স্বপ্ন, একটি ভবিষ্যৎ। সেই স্বপ্ন আজ রক্তাক্ত। তার ছোট মেয়ে সোহানার চোখে এখন অশ্রুজল, বুকভরা শূন্যতা। বাবার মৃত্যুর পর সে যেন দিশেহারা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ