গত বছর আগস্টে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন ইরানের সামরিক গবেষণা ইউনিটের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে ছিলেন পরমাণু বিশেষজ্ঞরাও। রাশিয়ায় তারা দ্বৈত-ব্যবহার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদেন উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সফরের নেতৃত্বে ছিলেন ৪৩ বছর বয়সী ইরানি পারমাণবিক পদার্থবিদ আলী কালভান্দ। এই বিজ্ঞানী কূটনৈতিক পরিষেবা পাসপোর্টে আরও চারজনের সঙ্গে মস্কোতে এসেছিলেন।
যদিও কালভান্দ বলেছেন, তারা একটি বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করছেন। পশ্চিমা কর্মকর্তারা গণমাধ্যমটিকে জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটিতে একজন সামরিক কাউন্টার-গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ইরানের প্রতিরক্ষামূলক উদ্ভাবন ও গবেষণা সংস্থার (এসপিএনডি) সঙ্গে যুক্ত সদস্যরা ছিলেন। একে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪-পূর্ববর্তী ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির সরাসরি উত্তরসূরি সংস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পারমাণবিক অস্ত্র অনুসন্ধানের কথা অস্বীকার করে আসছে এবং বলেছে তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। খামেনেয়ি গত মাসে বলেছিলেন, পশ্চিমারা তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সংঘাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল গত বছর ইরানের তিনটি স্বাধীন সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র এসপিএনডি পুনর্গঠনের মাধ্যমে তার গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের মতে, ইরানি প্রতিনিধিদল রাশিয়ান কোম্পানিগুলো পরিদর্শনে মূলত ইলেকট্রন অ্যাক্সিলারেটর এবং ক্লিস্ট্রন যেগুলো পারমাণবিক ইমপ্লোশন সিমুলেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন।
প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে নিউট্রন জেনারেটর- বেসামরিক এবং সামরিক প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস এবং বিকিরণ পরীক্ষার বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন, পাশাপাশি এসপিএনডির জন্য ক্রয় ফ্রন্ট হিসাবে কাজ করার জন্য ওয়াশিংটন কর্তৃক অনুমোদিত একটি কোম্পানির প্রাক্তন প্রধানও ছিলেন।
ইরানি প্রতিনিধিদল ট্রিটিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় আইসোটোপগুলোর অ্যাক্সেসও চেয়েছিল। এটি পারমাণবিক ওয়ারহেডের ফলন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মে মাসে ট্রিটিয়ামসহ বেশ কয়েকটি আইসোটোপ অর্জনে আগ্রহ প্রকাশ করে কালভান্ডের ফার্মের একটি চিঠি পর্যালোচনা করেছে তারা।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ বিষয়ক প্রাক্তন সিনিয়র পরিচালক প্রণয় ভাদ্দি বলেছেন, ‘এটা বিরক্তিকর যে রাশিয়া এবং ইরান যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় এই ধরনের লোকদের রাশিয়ায় এমন বৈঠক হতে পারে। রাশিয়ানরা উপাদান বা প্রযুক্তি ভাগাভাগি করছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এসপিএনডি এমন একটি সংস্থা যারা পারমাণবিক অস্ত্রের কাজে বিশেষভাবে এটি প্রয়োগ করবে।’
বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইনস্টিটিউটের প্রধান ডেভিড অ্যালব্রাইট সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছে, ‘আমরা এটিকে এক ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি হিসেবে বিবেচনা করি।’
এসপিএনডি কী?
এসপিএনডি ২০১১ সালে মোহসেন ফখরিজাদেহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করেছিল, ২০০৩ সালে এটি বন্ধ হওয়ার আগে ইরানের পূর্ববর্তী পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি, যা আমাদ পরিকল্পনা নামে পরিচিত, সেটি বাস্তবায়ন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এসপিএনডিকে তার প্রাতিষ্ঠানিক উত্তরসূরি বলে মনে করে।
সূত্র: ইরান ইন্টারন্যাশনাল