ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের হোস্টেল কক্ষ থেকে শরিফা ইয়াসমিন সৌমা (২১) নামের মেডিকেল ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় একটি সিরিঞ্জ ও ৪-৫ পৃষ্ঠার একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১টার দিকে ছাত্রী হোস্টেলের ৩১১ নম্বর কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
চিঠিতে শরিফা ইয়াসমিন সৌমা লিখেছিলেন, তোমরা সবাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ, যা কেউ চাইতে পারে। এখন তুমি বাস্তব জীবনে প্রবেশ করছো, তোমার স্বপ্নকে তাড়া করো, সফল হও। আশা করি তুমি বিদেশে যাবে, নিজের প্রতিভা প্রমাণ করবে এবং সবার মনে জায়গা করে নেবে। দাদু, তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা পছন্দ করি। এটা শুধু আমাদের বন্ধন নয়—তুমি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং প্রতিভাবান। আমি জানি তুমি আমাকে কত ভালোবাসো। তোমাকে হতাশ করায় আমি দুঃখিত।
ভাইয়া, তুমি সবচেয়ে চমৎকার, উদার মনের মানুষ। তোমার প্রতিটি ছোট্ট কাজ নজরে এসেছে। যখন প্রয়োজন হয়েছিল, তুমি উপদেশ দিয়ে আমাদের সবাইকে আগলে রেখেছো। মন শক্ত করো এবং দৃঢ় থাকো ভাইয়া। তুমি বড় হয়েছো। আর সব বাচ্চাদের জন্য অনেক ভালোবাসা—বাবাই, মিনি, বড় মাম্মা, আম্মা বুবি—তোমাদের সবাইকে আমি ভালোবাসি। তোমরা সবাই আমাদের জীবনের রঙধনু, আমাদের পরিবারের শক্তি।
অনুগ্রহ করে আমাকে ক্ষমা করার উপায় খুঁজে বের করো, যদি পারো। এটা যেন আকাশের লাখো তারা থেকে একটিমাত্র আলোর চলে যাওয়ার মতো। আমি কোথাও একটা মজার কবিতা পড়েছিলাম, যার কয়েকটি লাইন আমাকে ছুঁয়ে গেছে—‘নক্ষত্রের মতো ঝলমলে মানুষরা নেমে আসে পৃথিবীতে আলো বিলাতে, কিন্তু কখনো কখনো তারা ফিরে যায়, যখন সময়ের আগে ডাক আসে।’
আম্মা, আপনার কাছে নিজের ভুল স্বীকার করা খুব কঠিন। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আপনাকে খুশি রাখতে, কিন্তু এই ব্যর্থতা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে কঠিন। আপনার জন্য আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেয়ে হতে পারিনি বলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না। আমি জানি আপনি সবসময় আমার মঙ্গল চেয়েছেন, কিন্তু আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাও আপনাকে হতাশ করেছি। দয়া করে আমার জন্য কাঁদবেন না, নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন। নিজের জীবনটা শান্তিতে কাটাবেন, কারণ কিছু ভুলের জন্য এত কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। আবারও বলছি, আমি দুঃখিত আম্মা, আমি সত্যিই দুঃখিত।
আমি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। এমনকি এই তীব্র অবস্থা টানা এক সপ্তাহ চলেছিল। আমি খেতে পারতাম না, দিনে ৪–৫ বার বমি করতাম, মনে হতো আমার হৃদয় ফেটে যাবে। তবুও বেঁচে গেছি। ভেবেছিলাম এটা স্বাভাবিক—প্রথম ধাপ পার হলেই মানিয়ে নেবো। হয়তো সময়ের সাথে পছন্দ করব। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।
আবার আমি ভোরে মাঠের মধ্যে দৌড়াচ্ছি, শ্বাস নেওয়ার জন্য হাপাচ্ছি। পড়াশোনায় ব্যর্থ হচ্ছি, কাজের বোঝা জমে যাচ্ছে, ফাঁকা চেয়ে থাকি পাতার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা। কখনো মনে হয় চিৎকার করে কেঁদে ফেলি, কিন্তু এখানেও সেটা সম্ভব নয়। তাই আমি পায়ের দাগগুলোর দিকে তাকাই এবং মনে করি, জীবনে শুধু পড়াশোনা ছাড়াও অনেক কিছু আছে।
কিন্তু তারপরও মনে হয় আমি এখানে মানিয়ে নিতে পারছি না। সবসময় মনে হয় আমি যেন বহিরাগত—সবাইয়ের মধ্যে আলাদা, যেন কেউই আমাকে চায় না। আমি এত সাধারণ যে আলাদা করে চোখে পড়ি না—শুধুই অদৃশ্য। আমার মধ্যে কোনো বিশেষ গুণ নেই, নেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, নেই অন্য প্রতিভা, এমনকি সুন্দর মুখও নয়। আমি প্রায় নীরব হয়ে যাই সপ্তাহের পর সপ্তাহ। আর বিশ্বাস করো, এই একাকীত্ব…