Thursday, August 28, 2025

শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে পালালেন প্রধান শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল

আরও পড়ুন

‘বিগত দুই বছর আগে বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। সাধ্যের মতো চেষ্টা করছি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে। কিন্তু যে ছাত্রদের নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও পরিবেশের উন্নয়নের কথা ভাবছি। আজ সেই ছাত্রদের হাতেই অপমানিত হতে হলো আমাকে। একজন শিক্ষক হিসেবে এর চেয়ে আর বড় কষ্টের কি হতে পারে।’ এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মাদাম বিবিরহাট শাহাজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম নূর।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার মাদাম বিবিরহাট শাহাজানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

‎জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে স্কুল মাঠে বিক্ষোভ করে। ‎এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ছাত্রদের সৃষ্ট মব থেকে বাঁচতে নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। এই সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকে এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী তার মোটরসাইকেলের পিছনে দৌড়ে যেতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

‎বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পৃষ্ঠপোষক, পতিত স্বৈরাচারের অবৈধ মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের আস্থাভাজন, মাদামবিবির হাট শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম নুর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণকারী, অর্থলোভী এবং দুর্নীতিবাজ এ শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অনতিবিলম্বে আমরা তার পদত্যাগ চাই।

আরও পড়ুনঃ  প্রাইভেটকারে যুবককে আটকে বুথ থেকে তুলে নিল সাড়ে ৬ লাখ টাকা

‎ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক গোলাম নূর বলেন, ছাত্রদের সৃষ্ট মব থেকে বেঁচে এসেছি তার জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। আমার জানামতে আমি কোনো অপরাধ করিনি। তারপরও যদি অপরাধী হয়ে থাকে কিন্তু এভাবে মব সৃষ্টি করে আমাকে লাঞ্ছিত করবে সেটা কখনো কল্পনা করেনি। পেশাগত দায়িত্ব পালনে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আমার ছবি আছে। সেটাকে কেন্দ্র করে কিছু বহিরাগত ও স্কুলের শিক্ষার্থী মব সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রদের সৃষ্ট মব থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাওয়ার কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যার কারণে আমার আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের কাছে সম্মানহানি হয়েছে। যেখানে আমার আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের কাছে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু হয়ে থাকত। আজকে কিছু ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে সে মাথা নিচু হয়ে গেছে। এখন আমার আত্মহত্যা ছাড়া করা আর কোনো উপায় নেই। এই মব সৃষ্টির নেতৃত্ব দেন সাইফ আলী আরমান নামের স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী বলেও জানান তিনি।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ‎সাইফ আলী আরমান নিজেকে ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম নুরের পদ থেকে পদত্যাগের দাবিতে আমি নেতৃত্ব দিয়েছি। কারণ রিসান নামের এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলাতে আমরা প্রতিবাদ করি। এক পর্যায়ে স্কুলে গিয়ে জানতে পারি এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী তার ব্যাপারে ভালো মন্তব্য করে না। সে হলো আওয়ামী লীগের দোসর। এছাড়াও তার নিয়োগ অবৈধ।’

আরও পড়ুনঃ  এইমাএ পাওয়া: এক বাড়িতেই মিলল ২০৫ কেজি গাঁজা

‎বুধবার সকালে সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক গোলাম নূর এই বিদ্যালয়ে এসেছেন দুই বছর আগে। শিক্ষক হিসেবে তিনি খুব ভালো। স্কুলের শিক্ষার ও পরিবেশগত মান উন্নয়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছু বহিরাগত সাবেক স্কুলশিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীর একাংশের মদতে শিক্ষকের পদত্যাগের আন্দোলন চলছে।

‎অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী বলেন, শিক্ষক হিসেবে তিনি খুব ভালো। স্কুলের শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট তদারকি করেন। আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষকের কোনো খারাপ দিক বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। ‎১০ম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক হিসেবে তিনি খুব ভালো। কিন্তু কেন আন্দোলন হচ্ছে জানি না।

‎ফরিদা ইয়াসমিন নামের এক অভিভাবক ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের গায়ে পাথর ছুড়ে মারতেও দেখেছি, যা দেখে খুব কষ্ট লাগলো। আমার দুই সন্তান এই স্কুলের শিক্ষার্থী। আমার জানা মতে তিনি স্কুলে যোগদানের পর থেকে শিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দোষে-গুনে মানুষ, শিক্ষকের দোষ থাকতে পারে। কিন্তু একজন মানুষ গড়ার কারিগরকে তার প্রতিষ্ঠানে এভাবে লাঞ্ছিত হওয়া ভবিষ্যৎ শিক্ষক সমাজের জন্য অশনিসংকেত।

আরও পড়ুনঃ  থানায় ঢুকে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলাকারী সেই যুবকের মরদেহ উদ্ধার

‎শারমিন আক্তার নামের আরেক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে-মেয়েরাও প্রধান শিক্ষকের প্রশংসা করে। এছাড়াও শিক্ষার মান উন্নয়নে যথেষ্ট চেষ্টা করছেন।

‎বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাহাব উদ্দিন বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‎ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করেছে। এসময় অফিসে থাকা প্রধান শিক্ষক দ্রুত সরে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে শিক্ষার্থীরা থানা-পুলিশকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে ম্যানেজিং কমিটির হাতে অভিযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ‎সীতাকুণ্ড উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ইসমত আরা বেগম কালবেলাকে বলেন, মঙ্গলবার ঘটনার পর বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে একটি পক্ষ তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে চাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে।

‎তিনি আরও বলেন, নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। কাউকে পছন্দ না হলে পদত্যাগে বাধ্য করা আইনসিদ্ধ নয় বলেও জানান তিনি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ