স্বামী জাকির হোসেন বাইরে থাকার সুযোগে ‘প্রেমিক’ আব্দুল হাসানকে ঘরে ডেকে এনেছিলেন আর্জিনা বিবি। প্রেমিক-প্রেমিকা যখন ঘনিষ্ঠ অবস্থায়, ঠিক তখনই বাড়িতে ঢোকেন জাকির। এক ঝটকায় প্রেমিককে সরিয়ে দিয়ে স্বামীর কাছে ছুটে গিয়ে আর্জিনা বলেন, তাকে একা ঘরে পেয়ে ধর্ষণ করতে ঢুকে পড়েছে হাসান।
প্রেমিকার এমন অভিযোগে যেন আকাশ থেকে পড়েন প্রেমিক। প্রতিবাদ করতে গেলে তীব্র বাগবিতণ্ডা শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে। রাগের চোটে হাসানের গলা টিপে তাকে খুন করে ফেলেন জাকির। শুধু তাই নয়, প্রমাণ গায়েবের জন্য স্ত্রীকে নিয়ে হাসানের দেহাংশ কাটতে বসে যান তিনি।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে সদ্যমৃত হাসানের দুটি পা কেটে ফেলা হয়। তারপর শরীর থেকে আলাদা করে ফেলা হয় মাথা। দেহাংশ খণ্ড-বিখণ্ড করে ভাসিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে। আর কাটা মাথাটা জাকির লুকিয়ে রাখেন ‘গোপন আস্তানায়।’
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর; ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার রোহন্ডা-চণ্ডীগড় গ্রামে। ৭ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন দুর্ধর্ষ আর্জিনা-জাকির দম্পতি। স্ত্রীর প্রেমিককে হত্যা এবং অপরাধের প্রমাণ লোপাটের জন্য স্বামী জাকিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বারাসতের আদালত। আর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে আর্জিনার।
হত্যাকাণ্ডের রাতেই নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় মধ্যমগ্রাম থানায়। পরের দিন অর্থাৎ, ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর নোয়াই খালে ভেসে ওঠে হাসানের মরদেহ। এরপর ঘটনাক্রমে আর্জিনা এবং জাকিরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। এক সময়ে খুনের কথা স্বীকার করেন এই দম্পতি। পুলিশের কাছে আলাদা আলাদাভাবে জানান, কী ঘটেছিল।
তারপর ৭ বছর মামলা চলেছে। মোট ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাকির ও অর্জিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে বারাসত জেলা আদালত। শুক্রবার খুনের ঘটনায় দোষী জাকিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০০০ টাকা জরিমানা করেন বিচারক দীপালি শ্রীবাস্তব। জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত আরও ১ বছর কারাভোগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া জাকিরের স্ত্রী আর্জিনাকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ১০০০ টাকা জরিমানা করেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে অতিরিক্ত ১ মাস কারাভোগের নির্দেশ দেন বিচারক।