সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদকে আটকের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনকে ব্যাখ্যা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে গত ২ জুলাই এক চিঠিতে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
এ চিঠিতে বলা হয়, ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কর্মরত ছিলেন। গত ৮ আগস্ট তাদের চাকরিচ্যুত করে টিভি কর্তৃপক্ষ। চাকরিচ্যুতির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারিখটি বেছে নেওয়া হয়; কারণ, গত ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর সেদিন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। যদিও তাদের চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে সরকার কোনোভাবেই যুক্ত ছিল না। আর উক্ত দম্পতি চাকরিচ্যুতির বিষয়ে কোনো অভিযোগও করেননি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদসহ একদল লোকের বিরুদ্ধে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত ব্যক্তির ভাই গত ২১ আগস্ট ঢাকার উত্তরা থানায় একটি মামলা করেন। এরপর বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের আদালতে নেওয়া হলে পুলিশের আবেদনক্রমে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, নিজেদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ, স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও প্রয়োজনে চিকিৎসাসহ কারাবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য সব সুবিধা তারা পাচ্ছেন। ফারজানা রুপার মা মারা যাওয়ার পর তাকে শেষবার দেখার জন্য অংশ নিতে তাদের প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগেও ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা আছে। এ ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগসহ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা, তারা তা পাবেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন না। কাজেই সরকারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশের অভিযোগে তাদের আটক করার অভিযোগটি ঠিক নয়। পূর্ববর্তী সরকারের মেয়াদকালে সংঘটিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের আটক করা ও বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের কোনো লঙ্ঘন করা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষজ্ঞসহ তিন বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদকে আটকের বিষয়ে জানতে চেয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সরকারকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তাদের গ্রেপ্তার, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও বর্তমান অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়।