সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকে গ্রাহকের অর্থ আটকে যাওয়ার ঘটনায় মানুষের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে-সবচেয়ে বেশি সুদ দিলেই কি সেই ব্যাংক সবচেয়ে ভালো? নাকি নিরাপদে টাকা রাখতে কম সুদের ব্যাংকই বেছে নেওয়া উচিত?
বর্তমানে দেশের আর্থিক খাত নিয়ে মানুষের আস্থা কিছুটা নড়বড়ে। অতীতে এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে আমানতকারীদের টাকা ফেরত পেতে সময় লেগেছে, কেউ কেউ আবার আইনি ঝামেলাতেও জড়িয়েছেন। তাই কষ্টের জমানো টাকা কোন ব্যাংকে রাখবেন, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সচেতন হওয়া জরুরি।
বেশি সুদের লোভে পা দেবেন না
বাজারে কিছু ব্যাংক চটকদার অফার দিয়ে বেশি সুদের প্রলোভন দেখায়। তবে এটি মোটেই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নয়। বরং এমন ব্যাংকগুলো অনেক সময় তারল্য–সংকটে পড়ে উচ্চ সুদের লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করে। পরে দেখা যায়, তারা মূলধন ফেরত দিতেই হিমশিম খাচ্ছে। তাই যে ব্যাংক অস্বাভাবিক হারে সুদ দিচ্ছে, তার আর্থিক অবস্থা নিয়ে সন্দেহ করাই ভালো।
প্রতিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তাদের সুদের হারের হালনাগাদ তথ্য থাকে। কাছাকাছি কোনো শাখায় গিয়ে সরাসরি খোঁজ নিয়েও আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মনে রাখবেন, টাকা ফেরত না পেলে তার উপর সুদের কোনও মূল্য নেই।
অনলাইন সুবিধা আছে কি?
ব্যাংক বাছাইয়ের সময় এটাও বিবেচনায় নিন যে, তাদের ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা কতটা কার্যকর। এখন অনেকেই মোবাইলেই ব্যাংকিং করেন। তাই সেবা সহজলভ্য এবং ব্যবহারবান্ধব হলে তা আপনার সময় ও ঝামেলা দুই-ই কমাবে।
ঝুঁকি কমাতে টাকা ভাগ করুন
যদি আপনি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যাংকে রাখেন, তাহলে একাধিক ব্যাংকে ভাগ করে রাখার চিন্তা করুন। এতে একটি ব্যাংকে কোনো সমস্যা হলেও আপনার সম্পূর্ণ অর্থ ঝুঁকিতে পড়বে না। অর্থাৎ ডাইভারসিফিকেশনই হতে পারে নিরাপত্তার চাবিকাঠি।
ভালো ব্যাংক চেনার কিছু দিক
১. পরিচালনা পর্ষদ কেমন? ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা কারা এবং তাদের পেশাগত-পারিবারিক পরিচিতি কী, তা যাচাই করতে পারেন। একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পরিচালক থাকলে পুরো ব্যাংকের প্রতি আস্থা বাড়ে।
২. বড় গ্রাহকদের চেনা যায় কি? ব্যাংকগুলো প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বড় অঙ্কের ঋণগ্রহীতাদের নাম দেওয়া থাকে। এগুলো দেখে বোঝা যায়, ব্যাংকটি কার কাছে কতটা ঝুঁকি নিয়েছে।
৩. নিয়োগ ও পেশাদারিত্ব ভালো ব্যাংক সাধারণত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় লোক নিয়োগ করে এবং দক্ষ কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত হয়। শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও সততা মূল্যায়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
শুধু সুদের হার নয়, একটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, ব্যবস্থাপনা কাঠামো, গ্রাহকসেবা এবং পরিচালনার স্বচ্ছতা মিলিয়েই নির্ধারণ হয় সেই ব্যাংকে টাকা রাখা কতটা নিরাপদ। আপনার জমানো অর্থের জন্য একটি ভালো ব্যাংক বেছে নেওয়া মানে শুধু মুনাফা নয়, মানসিক শান্তিও।