২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে অথবা এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এদিকে, নির্বাচন আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সংস্কার ও জুলাই সনদের মতো অমীমাংসিত ইস্যু থাকায় প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ও নির্দেশনা
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
পরে রাত ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের বিস্তারিত জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচনী প্রস্তুতির রিভিউ করা হয়েছে। এছাড়া, আগামী মাসগুলোতে কঠোর আইন প্রয়োগের কথাও জানানো হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
বিএনপি
প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টাকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বলেন, “এটা একটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা আশা করি, এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি সেরে নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগোবে।”
জামায়াতে ইসলামী
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তেমন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “আমরা চাই, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হোক। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি রক্ষার ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই।” তবে গত জুনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন।
এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের আগে সংস্কার ও জুলাই সনদ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমাদের সমস্যা নেই, কিন্তু মৌলিক সংস্কার ও জুলাই সনদের দৃশ্যমান পদক্ষেপ জরুরি। সরকার কেনো জুলাই সনদ দিতে পারছে না, তা স্পষ্ট করা উচিত।”
সংস্কার ও ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ প্রস্তুত করা সম্ভব। তিনি বলেন, “আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চাই আমরা।”
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষ হলে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধেই ভোট হতে পারে। তবে সংস্কার, জুলাই সনদ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগ এখনও রয়ে গেছে।
বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও এনসিপির মতো দলগুলো সংস্কারের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।