Friday, July 18, 2025

‘যে ভাইরে আগলাইয়া রাখলাম, সে-ই সব শেষ কইরা দিল’

আরও পড়ুন

দুইটা সন্তান। মেয়েটা বড়, বয়স ছয় আর ছোট ছেলেটার বয়স মাত্র দুই। সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভালুকা চলে আসেন রফিকুল। একটি স্পিনিং মিলে শুরু করেন কাজ।

নিয়েছেন দুই রুমের ছোট্ট একটা বাসা৷ ভালোই যাচ্ছিল দিন। কিন্তু ছোট ভাইটার জন্য মন কাঁদে রফিকুলের। ছোট ভাই নজরুল দুই বছরের বেশি সময় ধরে জেল খাটছে জয়দেবপুর থানার একটি হত্যা মামলায়। বড় ভাই রফিকুল ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে ছোট ভাইয়ের জামিনের ব্যবস্থা করেন। নিজের ভাড়া বাসায় একটি কক্ষ ছেড়ে দিয়ে থাকতে দেন ছোট ভাইটাকে। রিকশা চালাচ্ছিল সে। কদিন ধরে বলছিল একটু বেশি করে কামাই করতে, সংসার যে ভালোভাবে চলে না তাই। রোববার রাতে নাইট ডিউটিতে চলে যায় রফিকুল। রাত ১০টার দিকে নজরুলের মোবাইলে কল দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষকের গোপনাঙ্গ কেটে ফেলা শিক্ষিকার পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু

সকাল ৯টা। কারখানা থেকে বাসায় ফেরেন রফিকুল। এ কি বাসা কেন তালাবদ্ধ। সবাই কোথায়। ডাকাডাকি করছে রফিকুল। কারও কোনো সাড়াশব্দ নেই। তালা ভেঙে ঢোকেন ভেতরে। তিনজন বিছানায় শুয়ে আছে। কম্বল দিয়ে পুরো শরীর ঢাকা। একটা অংশ তুলতেন মেয়ের গলাকাটা লাশ। স্তব্ধ হয়ে যান রফিকুল। এ দৃশ্য দেখেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে দেখেন মা-ছেলে-মেয়ে তিনজনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে পালিয়েছে সেই ছোট ভাই নজরুল।

‘যে ভাইরে আগলাইয়া রাখলাম, সেই ভাই-ই সব শেষ কইরা দিল। আমার সাজানো সংসার সব তছনছ করে সে পালিয়ে গেছে।’ অঝোরে কাঁদছিলেন আর এসব কথা বলছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ নিহত ময়না বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম। অভিযোগ করছিলেন তার ভাই নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুনঃ  লাশ নেয়নি কেও, বাবার মৃত্যুর খবরে ফোন বন্ধ করে দিলেন ছেলেও!

রফিকুল কাঁদছে, চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তবুও তার বুকফাটা কান্না থামছে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। এক রাতের মধ্যেই ঝড়ে শেষ হয়ে গেছে তার সব স্বপ্ন। যাদের জন্য জীবনটা ছিল, তারা এখন আর নেই। নিহতরা হলেন—গৃহবধূ ময়না আক্তার (৩০), তার মেয়ে রাইসা (৭) এবং ছেলে নীরব (২)।

সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে ভালুকা পৌরসভার টিঅ্যান্ডটি রোড এলাকার ভাড়া বাসায় এ ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশ জানায়, রফিকুলের ছোট ভাই নজরুল ভালুকা পৌর এলাকায় এক ব্যক্তির কাছে সকাল ৮টার দিকে নিজের মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে পালিয়েছে। ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে তিনি অটোরিকশা চালাত। বাড়িটির যে কক্ষে নজরুল থাকত, সেখানকার খাটের নিচ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  যুবদল নেতার ছেলের রহস্যজনক মৃত্যু, সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম কালবেলাকে বলেন, নিহতের দেবর নজরুল কথা কম বলত। অন্যদের সঙ্গে মিশত কম। এসব কারণে ভাবির সঙ্গে তার টানাপোড়েন চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি পারিবারিক কারণে ঘটেছে।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থেকে দেবর পলাতক রয়েছে। তবে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং খুনি গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। আশা করছি, খুব দ্রুত ঘটনাটি স্পষ্ট হবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ