নিউটনের সূত্র ভুল প্রমাণ করা কে এই পঞ্চগড়ের বিজ্ঞানী!
নিউটনের মহাকর্ষের সূত্র ভুল! একটি ছাড়া গতি প্রসঙ্গে নিউটনের আবিষ্কৃত একটি অসম্পূর্ণ এবং অপরটি শুধুই কাল্পনিক যুক্তিমাত্র। এমন দাবি বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের এক বিজ্ঞানীর! এখন প্রশ্ন তিনি কীভাবে সূত্রগুলোকে ভুল প্রমাণ করেছেন। নিউটনকে ভুল প্রমাণ করা কে এই পঞ্চগড়ের বিজ্ঞানী?
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামের এই ব্যক্তির নাম আফসার আলী। পেশায় একজন যন্ত্রবিদ। বয়স ৬৫। একসময় কাজ করতেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে। তার দাবি, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রটি ভুল। এছাড়া বিশ্ববিখ্যাত ওই বিজ্ঞানীর গতির তিনটি সূত্রের মধ্যে দ্বিতীয়টি পরিপূর্ণভাবে সঠিক। বাকি দুইটির একটি আংশিক সঠিক, অপরটি কাল্পনিক যুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
খরচবিহীন ইঞ্জিন আবিষ্কার করতে গিয়ে সূত্রগুলো নিউটনের সূত্রগুলো ভুল বলে দাবি করেছেন আফসার আলী। তিনি বলেন, আমি বহুদিন যাবত এই চিন্তা করতেছিলাম, জ্বালানি ছাড়া অর্থাৎ তাপ-শক্তি-বিদ্যুৎ ছাড়া বিনাখরচে ইঞ্জিন চালানো যায়। এই ব্যাপারে আমি গবেষণা শুরু করি। একসময় এই গবেষণা নিয়ে আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাই। বিজ্ঞান জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে যাই।
তিনি আরও বলেন, যেখানে বায়ুমণ্ডলের চাপ প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ১০ নিউটন বা ১ কেজি ওজনের সমান এবং অভিকর্ষ বল ক্রিয়াশীল সেখানে জ্বালানি, বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো শক্তি ছাড়া ইঞ্জিন চলবে এটা কাল্পনিক। আসমানে বা জমিনের নিচে চলতে কিন্তু এই পৃথিবীতে চলবে না। তখন আমি মহাকর্ষ বল, নিউটনের গতির সূত্র, তারপরে বায়ুচাপ সম্বন্ধিত বর্ণনা ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। একপর্যায়ে আমার নজরে বিজ্ঞানী নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র কাল্পনিক ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীর গতির প্রথম সূত্র সঠিক কিন্তু অসম্পূর্ণ মনে হয়।
কেন এই সূত্রকে অসম্পূর্ণ মনে হলো আফসার আলীর। ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, কারণ বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরলভাবে চলতে থাকে। এখন এই বাহ্যিকবল প্রয়োগ করতে হবে। কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে, কে প্রয়োগ করবে, কোত্থেকে আসবে এটা সূত্রে দেওয়া নাই। এ জন্য এটাকে আমি অসম্পূর্ণ মনে করতেছি।
দ্বিতীয় সূত্র নিয়ে তিনি বলেন, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে। এই সূত্র পূর্ণতা পেয়েছে এবং সঠিক।
নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র নিয়ে তিনি আরও বলেন, তিন নম্বর সূত্র কাল্পনিক যুক্তি মাত্র। প্রত্যেকেরই একটি ঘর্ষণ অথবা বাধা অথবা প্রতিক্রিয়া আছে। ঘর্ষণ, বাধা, প্রতিক্রিয়া সমান হলে বস্তু স্থিতি জড়তায় ও বাধাহীন পথে গতি জড়তায় আপন জড়তা ধর্ম পালন করে।
দীর্ঘ চাকরিকালে ১৯৯৬ সালে ইঞ্জিন চলাচলের একটি সূত্র আবিস্কার করেন আফসার আলী। তিনি মনে করেন, তার সূত্রগুলো ঠিক এবং প্রমাণ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, রকেট চলতেছে প্রতিক্রিয়ার বলে, এটাও ভুল। এটা কাল্পনিক। এটা যুক্তিমাত্র। আসলে রকেট চলে ভরবেগের ক্রিয়ার ওপর। এ জন্য তৃতীয় সূত্র কাল্পনিক সূত্র মাত্র।
আফসার আলী মৃত ইয়াকুব আলীর তৃতীয় ছেলে। তিনি ১৯৭৫ সালে জগদল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে দুইবছর মেয়াদী একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন।
বর্তমানে তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজ নগর গ্রামে বসবাস করছেন। নবম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বই গুলো তিনি অধ্যায়ন করতেন। বিজ্ঞান বিষয়ে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধও লিখেছেন। লিখেছেন বইও। কিন্তু সুযোগের অভাবে এখনো কোথাও তা প্রকাশ হয়নি। তিনি চান এগুলো প্রকাশ করতে।
আফসার আলীর দাবি, নিউটনের ভুল এবং কল্পিত সূত্রগুলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তার সূত্রগুলো প্রমাণ করার জন্য সুযোগ এবং সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এজন্য তিনি সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন।